রাজশাহীতে মামলা থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীর নাম বাদ দেওয়া নিয়ে ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মো. সাইমুন রেজাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মো. সাইমুন রেজা রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন দলীয় পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শুক্রবার রাতেই সেই চিঠি দেখেছেন বলে জানান মো. সাইমুন রেজা। তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি সম্মান জানান। তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ায় তিনি অসন্তুষ্ট নন। তবে তিনি পরে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করবেন। গণমাধ্যমেই তিনি তাঁর অবস্থান এবং মূল ঘটনা তুলে ধরবেন। তিনি পদ-পদবির জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি দলের কর্মী ছিলেন, আজীবন থাকবেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা সাইমুন রেজা বাদী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেলকেও আসামি করা হয়। মামলায় পায়েল নামের আরেক আসামি আছেন, যিনি আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। এই পায়েলের কাছেই টাকা চেয়েছেন সাইমুন রেজা। এ বিষয়ে দুজনের কথোপকথনের সাতটি অডিও-ভিডিও ক্লিপ রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল নেতা মাকসুদুর রহমান সৌরভ ফেসবুকে প্রকাশ করেন।
কথোপকথনের একটি অডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘কাল তো মঙ্গলবার। কাল আমি লোন লেখাব। ইনশা আল্লাহ আগামী মঙ্গলবার দিয়ে দেব।’ অন্যজন বলছেন, ‘সবার কথা হলো, ৫০-এর নিচে আসবে না। আমি কথা বললাম। ওদের সবারই একটা মতামত, আমরা কিছু নামলাম, ওকেও কিছু উঠতে বলো। আর পাঁচটা হাজার টাকা দিয়ে ২৫ করতে বলো। যদি হয় তো বলো, যা করার করে দিচ্ছি। ওর কোনো সমস্যা হবে না।’
আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকার মতো রেডি করে ফেলেছি। আর ১৫ হাজার টাকা, আর তো দুই দিন টাইম নেওয়া আছে। আমি যেদিন টাকা দেব, সেদিনই কোর্ট থেকে নামটা তুলে দেবেন না ভাইয়া।’ তখন অপরজন বলেন, ‘আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি দোকানে বসবেন। আপনার কোনো সমস্যা হলে আমি আছি।’
আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি, ওখানে আপনি ১০ মেরে দিয়েন। আপনি দোকান করবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমার নম্বর তো থাকলই। সমস্যা হলে আমাকে কল দেবেন। আপনার নাম অটোমেটিক কাটা হয়ে যাবে। আপনি দেখবেন। কাটা হয়ে গেলে আপনাকে ছবি তুলে দিয়ে দেব।’ অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলছেন, ‘তাহলে আমি পরশু দিন ফুল পেমেন্ট দিয়ে দেব।’ তখন অন্যজন বলছেন, ‘আজ ১০ হলে ভালো হয়, আমার একটু লাগত।’
আরেকটি অডিওতে জেলে না যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনার যদি দুই দিনের লাইগাও ভেতরে থাকতে হয়, আপনার স্যান্ডেল খুইলে আমার গালে মাইরেন, যান।’ অপর অডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি একা না। আরও দু-তিনজনকে বের করা লাগবে। তোমাকে যেটুকু হেল্প করছি, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবেই রিস্কের মধ্যেই করছি।’
এ ঘটনায় ১৪ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘আসামির নাম কাটা নিয়ে রাজশাহীতে ছাত্রদল নেতার দেনদরবার ফাঁস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সাইমুমকে দলের সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।