মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীকে রাজশাহী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আগেও তিনি ওই কর্মস্থলেই ছিলেন। আজ মঙ্গলবার এই বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাউশির রাজশাহী কার্যালয় থেকে পরিচালককে বের করে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘রাজশাহীতে মাউশির আঞ্চলিক পরিচালককে বের করে দিয়ে কার্যালয়ে তালা দিলেন একদল তরুণ’ শিরোনামে ওই রাতেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পরে রাতেই রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ওরফে সুইট ও ছাত্রদলের রাজশাহী কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোরাব আলী পারভেজকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কারের কথা জানায় মহানগর বিএনপি।
তবে তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজশাহীতে বিক্ষোভ হয়। আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানান। যুবদলের সাবেক এই নেতা বর্তমানে বিএনপির কোনো পদে নেই। তবে তিনি বিএনপি নেতা হিসেবেই পরিচিত।
আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজশাহী জজকোর্টের আইনজীবী মো. এনামুল হক, সাবেক ছাত্রদল নেতা তোরাব আলী পারভেজ ও কাউসার আলী নামের এক ব্যক্তি ৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে ও ৯ অক্টোবর শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী ও তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে মাউশি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী বলেন, তাঁর কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনার পরে ৩ অক্টোবর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে তিনি তাঁর আগের পদে (রাজশাহী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ) ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে আগের পদে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কারও অভিযোগের কারণে তাঁকে বদলি করা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সত্য নয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর একদল তরুণ মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকের অফিসে যান। তাঁরা ‘স্থানীয়’ পরিচয় দিয়ে পরিচালক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে পরিচালক মাউশির মহাপরিচালককে ফোন করার জন্য মুঠোফোন হাতে তোলেন। কিন্তু ওই তরুণেরা তাঁকে ফোন করতে বাধা দেন। চাপের মুখে অধ্যাপক ব্যানার্জী কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান। এরপর ওই তরুণেরা কার্যালয়ে তালা দেন। এই তরুণেরা সাবেক যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদের অনুসারী বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, ‘ওরা কেউ আমার লোক না। তাঁরা সাধারণ ছাত্র-জনতা। তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এতে আমার সমর্থন ছিল। এটা যদি আমার অপরাধ হয়, তাহলে অপরাধ। এই কারণে আমাকে বহিষ্কার করলে দলের জন্যই দুঃখজনক।’
অফিস থেকে বের করে দেওয়ার পর বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী ঘটনাটি বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবিরকে জানিয়েছিলেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, যাঁরা ওই কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়েছিলেন তাঁরা কেউ শিক্ষার্থী নন। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। এভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে কাউকে কার্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য করা যাবে না। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।