ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে আবারও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বিস্ফোরণ

সংঘর্ষ চলাকালের একটি দৃশ্য। আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের খয়াসার-বিরাসার সড়ক এলাকায়
ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে এবং খয়াসার-বিরাসার সড়ক এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের হাতে রামদা, ছুরি, ককটেল ও লাঠিসোঁটা দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে শহরের লোকনাথ দীঘির পাড়ে (টেংকের পাড়) সম্প্রতি ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ও বিদায়ী কমিটি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির আয়োজন করে। নতুন কমিটির আনন্দমিছিল ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিদায়ী কমিটির বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সকাল ১০টার দিকে জেলা ছাত্রদল ও জেলা যুবদলের নেতা-কর্মীরা বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরাও সেখানে জড়ো হন। নতুন কমিটির নেতা-কর্মীরা আনন্দমিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা পেছন থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকা ছাত্রদল, কৃষকদল ও জেলা যুবদলের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে ছত্রভঙ্গ হওয়া নেতা-কর্মীরা পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জেলা ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান বলেন, পদ না পেয়ে একটি পক্ষ এমন করছেন। আনন্দমিছিল করতে গেলে তাঁরা অতর্কিতভাবে পেছন থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।

নতুন কমিটির সব কার্যক্রম প্রতিহত করা হবে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা গত শুক্রবার থেকে হামলা চালাচ্ছেন। গত শনিবারও তাঁরা কান্দিপাড়ায় হামলা করেছেন। আজ আনন্দমিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা জেলা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পরে তাঁদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। গত শনিবারের ঘটনায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৬০ থেকে ৬৫ জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম শেখ। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে দেওয়া হবে না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহীনুর রহমানকে আহ্বায়ক, সমীর চক্রবর্তীকে সদস্যসচিব ও পাঁচজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এর মধ্যে সমীর চক্রবর্তী আগের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পাওয়া ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান ওরফে সানির বড় ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়ার অনুসারী বলে পরিচিত। কবির আহমেদ সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা। আগামী এক মাসের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন রুবেল চৌধুরী।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফের কান্দিপাড়ার বাসায় সদ্যঘোষিত জেলা ছাত্রদলের কমিটির সদস্যদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী ও সাবেক সদস্যসচিব মহসিন মিয়ার নেতৃত্বে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবু শামীমের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। একই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রুবেল চৌধুরীর নেতৃত্বে কান্দিপাড়ায় সদ্যঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমানের বাসায় এবং জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর কাউসার মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। গত শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা সদস্যসচিব সমীর চক্রবর্তীর পাইকপাড়ার বাসা ঘেরাও করেন। এরপর শহরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে রুবেল চৌধুরীর নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কৃষক দল ও ছাত্রদলের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় ২০ থেকে ২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।