সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মো. কবির হোসেনের একটি বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এখন পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সহ–উপাচার্য মো. কবির হোসেন। সেদিন তাঁর দেওয়া বক্তব্যের অংশবিশেষ দুই দিন ধরে ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ক্লিপটি ২ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বক্তব্যে সহ–উপাচার্য মো. কবির হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার পাশাপাশি আমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে এবারের নির্বাচন মোকাবিলা করতে হবে। যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না আসতে পারেন, মনে রাখবেন, আমাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। আপনারা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, আপনারা সহাবস্থান করতেছেন, আপনারা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে চান। কিন্তু তারা আপনার রগ কেটে দেবে, গলা কেটে দেবে, আপনাকে তারা ক্ষমা করবে না।’
অধ্যাপক কবির হোসেন বলেন, ‘আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। এলাকায় গিয়ে ইলেকশনের ১৫ দিন আগে...। পড়াশোনা বহুত করছেন, ইলেকশনের ১০-১৫ দিন আগে এলাকায় গিয়ে গিয়ে মানুষকে বোঝাবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আজকে যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকেন, আজকে যদি আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকে, তাহলে আমরা বাঁচব এক সাথে।’
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সহ–উপাচার্য বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে ইলেকশন আছে, সেই ইলেকশনে যে যেভাবে পারেন... (অস্পষ্ট)। আমার শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য যা করণীয় দরকার, তাই করতে হবে। শেখ হাসিনার যদি অস্তিত্ব না থাকে, যদি আওয়ামী লীগ না আসে, তাহলে কিন্তু এই দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। আমরা রক্ত চাই না। আমরা চাই শান্তি।’
মিলনায়তনে ছাত্রদের উদ্দেশে অধ্যাপক কবির হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সামনে রেখে আমি এতটুকু বলতে চাই, আজকে আমি যতগুলো মিছিল তোমাদের দেখেছি, এই মিছিলকে তোমরা সুন্দর করে ধরে রাখো। আমেরিকা আর কানাডার ভিসার জন্য বসে থাকতে হবে না। এই দেশকে ভালোবাসো, যোগ্য আওয়ামী লীগ হও। এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছ, এই দেশে মৃত্যুবরণ করো। আমেরিকার মোড়লগিরি আর অন্য দেশের মোড়লগিরি বাদ।’
সহ–উপাচার্যের বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনাকারীদের ভাষ্য, একজন সহ–উপাচার্যের এমন রাজনৈতিক বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার সঙ্গে কোনোভাবেই মানানসই নয়। একজন শিক্ষক একটি দলের পক্ষে এভাবে কথা বলতে পারেন না।
অন্যদিকে সহ–উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে একটি অংশ ফেসবুকে লিখেছে, দেশ এখন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী—দুই ভাগে বিভক্ত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের অনুসারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সহ–উপাচার্য সঠিক বক্তব্যই দিয়েছেন।’
জানতে চাইলে সহ–উপাচার্য মো. কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু সেদিন জাতীয় শোক দিবস নিয়ে আলোচনা সভা ছিল, তাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করাই যেতে পারে। একটা মহল জাতির পিতার বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল, সেই মহলটি প্রতি নির্বাচনের আগে অপতৎপরতা চালায়, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।’
অধ্যাপক কবির আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আমার নিজের চাচিকে পাকিস্তানি সেনারা নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছে, আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে। এরপর ১৫ আগস্টের ঘটনাও কত মর্মান্তিক। ১৫ আগস্টের তাৎপর্য অনেক গভীর, অনেকে সেটা জানে না। আসলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রকৃত চেতনার পক্ষে নতুন প্রজন্মকে সজাগ রাখতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি।’