দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর আগামী সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে পদপ্রত্যাশীরা নড়েচড়ে বসেছেন। সভাপতি-সম্পাদক পদে আসতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন তাঁরা। রাজনীতির মাঠে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। শীর্ষ নেতৃত্বে কে আসবে, এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
আজ শনিবার সকাল থেকে সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, কাজলা গেট, প্যারিস রোড, টুকিটাকি ও পরিবহন চত্বরে পদপ্রত্যাশী নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও সাইনবোর্ডে ছেয়ে গেছে। সাবাশ বাংলাদেশ মাঠে প্রস্তুত করা হচ্ছে সম্মেলন মঞ্চ। মিটিং-মিছিল ও শোডাউন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। রুটিন করে দলীয় টেন্টে বেড়েছে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পাল্লা দিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে পদপ্রত্যাশীদের মহড়া ও স্লোগান। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই কমিটির মেয়াদ ২০১৭ সালে ১১ ডিসেম্বরেই শেষ হয়। তবে সেই কমিটির নেতৃত্বেই এত দিন চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কার্যক্রম।
গত সাড়ে ছয় বছরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তিনবার পরিবর্তন এলেও এই কমিটির পরিবর্তন হয়নি। এ সময়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, প্রক্সিকাণ্ড, ছিনতাই, আবাসিক হলে আসন–বাণিজ্যের মতো বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠন।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরে সেই সম্মেলন স্থগিত করা হয়। ওই সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেন ৯৪ জন পদপ্রত্যাশী। পরে গত ৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করে। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্য লক্ষ করা গেছে। ওই ৯৪ জনের মধ্যে থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশীদের মধ্য থেকে সভাপতি ও সম্পাদক পদে আসতে পারেন—এমন কয়েকজন নেতার নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে আছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, সহসভাপতি মেজবাহুল ইসলাম ও জাকিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মামুন। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন আরও কয়েকজন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী বেশির ভাগ নেতার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অনেকেই ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় অনেক নেতা-কর্মী ঝরে গেছেন। যাঁরা ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করতে রাজপথে ছিলেন, সেই পরীক্ষিতদের মধ্যে থেকে কেউ নেতৃত্বে আসুন, যাঁরা সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
পদপ্রত্যাশী অন্তত ১০ নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলছেন, নেতৃত্বে এলে আসন–বাণিজ্য ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়তে কাজ করবেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সামনের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চান। এ ছাড়া ছাত্রলীগের এই ইউনিটকে শক্তিশালী ও শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করতে চান তাঁরা।
সুষ্ঠু ও সুন্দর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে চান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান, দক্ষ সংগঠক, পরিশ্রমী, রাজপথের ত্যাগী সৈনিক, সংগঠনের প্রতি নিবেদিত হয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করবেন, দলের নীতি-আদর্শ বজায় রাখবেন, তাঁদের নেতৃত্বে দেখতে চান।