দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে স্ত্রী গৌরী বালার কাঁধে চড়ে আসেন বীরেন্দ্র নাথ রায় (৭২)
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে স্ত্রী গৌরী বালার কাঁধে চড়ে আসেন বীরেন্দ্র নাথ রায় (৭২)

স্ত্রীর কাঁধে চড়ে স্মার্ট কার্ড নিলেন বীরেন্দ্র নাথ

অজানা রোগে দুই পা সরু হয়েছে। কয়েক বছর আগেই হাঁটার ক্ষমতা হারিয়েছেন বীরেন্দ্র নাথ রায় (৭২)। স্ত্রীর ওপর ভর করেই চলাফেরা তাঁর। সরকার থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, এমন খবরে রোববার সকালে বাড়ি থেকে ভ্যানে চড়ে আসেন তিনি।। ভ্যান থেকে নেমে স্ত্রীর কাঁধে চড়ে স্মার্ট কার্ড নিতে যান। বুথ থেকে স্মার্ট নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন বীরেন্দ্র নাথ।

রোববার বেলা ১১টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্মার্ট কার্ড নিতে এসেছিলেন বীরেন্দ্র নাথ রায়। তিনি উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হরিরামপুর গ্রামের বিপিন চন্দ্র রায়ের ছেলে। তিনি আগে কৃষি শ্রমিক ছিলেন। তাঁর একমাত্র ছেলে শ্যামল চন্দ্র রায়ও (৩০) শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ। অসুস্থ স্বামীকে কাঁধে করে স্মার্ট কার্ড নিতে এসেছেন স্ত্রী গৌরী বালা।

বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে গৌরী বালার কাঁধে চেপে বীরেন্দ্র যখন বুথের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন মাঠে স্মার্ট কার্ড নিতে আসা নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি ছিল। সারিতে থাকা মানুষেরা তাঁদের দেখে বলতে থাকেন, ‘আহা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কী ভালোবাসা।’ সারিতে থাকা মানুষেরা দুজনকে বুথে আগে প্রবেশের সুযোগ করে দেন। অসুস্থ স্বামীকে কাঁধে নিয়েই ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের আইরিশ ও রেটিনা স্ক্যান করার জন্য বুথে যান গৌরী বালা। সেখান থেকে টোকেন নিয়ে বের হন বীরেন্দ্র-গৌরী দম্পতি। পরে একজন সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় বিতরণকক্ষ থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেন বীরেন্দ্র নাথ ও গৌরী বালা। পরে আবার স্ত্রী গৌরী বালার কাঁধে চড়ে বিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হয়ে বাড়িতে ফিরে যান বীরেন্দ্র নাথ।

বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে বীরেন্দ্র নাথ বলেন, ‘সরকার থাকি নাকি ব্যাবাক মানুষক স্মার্ট কার্ড দ্যাছে। এই কার্ড না নিলে নাকি হামরা সরকার থেকে কোনো সাহায্য পামো না। বাঁচমো কি মরমো, তাই কার্ডটা নিবার আইচি।’

কথা বলে জানা যায়, বীরেন্দ্র নাথ ভাতা পান। তবে আশপাশের লোকজন জানান, স্মার্ট কার্ড না থাকালে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই তিনি কার্ড নিতে এসেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আলী বলেন, বিরামপুর উপজেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণে অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক সুযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বুথ থেকে অসুস্থ বীরেন্দ্র নাথ রায়ের ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের আইরিশ ও রেটিনা স্ক্যান নিশ্চিত করেছেন। ভবিষ্যতে অন্য ইউনিয়নে স্মার্ট কার্ড বিতরণে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তিনি কঠোর নজরদারি করবেন।

সমসের আলীর (৯৬) হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম

সমসের আলীও পেলেন স্মার্ট কার্ড
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সমসের আলী (৯৬) দুদিন ধরে স্মার্ট কার্ড নিতে এসে ব্যর্থ হন। তবে রোববার সমসের আলীকে আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি। লোক পাঠিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পরে সমসের আলী ও তাঁর স্ত্রীর বায়োমেট্রিকের কাজ করিয়ে নতুন স্মার্ট কার্ড তুলে দেন তাঁদের হাতে। এ সময় সমসের আলীকে দেওয়া হয় আর্থিক সহযোগিতা।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা উচ্চবিদ্যালয়ে সমসের আলীর হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেন ইউএনও নুজহাত তাসনীম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আলী ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আবদুস সালাম। বেলা সাড়ে তিনটায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ কেন্দ্র কাটলা উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ।

কাটলা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি থেকে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু করে উপজেলা নির্বাচন দপ্তর। গত ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি কাটলা ইউনিয়নের ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কার্ড বিতরণ করা হয়। দুদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে ছয়টি ওয়ার্ডের লোকজন সারিতে দাঁড়ান।

স্থানীয় লোকজন বলেন, নারী-পুরুষ আর বয়স্কদের জন্য শুধু একটি কক্ষেই সব কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই কক্ষের ভেতরে একটি বুথের সামনে নারী-পুরুষের ধাক্কাধাক্কি হয়। গত দুই দিন ধরে সেই ধাক্কাধাক্কিতে টিকতে না পেরে অসুস্থ সমসের আলী বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান।

গত শনিবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘স্মার্ট কার্ড নিতে এসে খালি হাতে বাড়ি ফিরলেন সমসের আলী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন সমসের আলীকে কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করে।