সীতাকুণ্ডের এস এন করপোরেশন শিপ ইয়ার্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধ এক শ্রমিককে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। পাশে উৎকণ্ঠিত স্বজনেরা। আজ বেলা তিনটায়
সীতাকুণ্ডের এস এন করপোরেশন শিপ ইয়ার্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধ এক শ্রমিককে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। পাশে উৎকণ্ঠিত স্বজনেরা।  আজ বেলা তিনটায়

‘হঠাৎ এমন বিপদ কেন এল’

সারা শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মুখমণ্ডলে পোড়া দগদগে ক্ষত। বিছানায় কাতরাচ্ছেন মো. হাবিব (৩৬)। বাবার এমন অবস্থা দেখে মেয়ে হিয়ার চোখ ছলছল করছে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটি হতভম্ব। ভয়ে মায়ের পাশ ছাড়ছে না সে।

হাবিবের স্ত্রী সামিনা আকতার মেয়েকে ধরে আছেন। মেয়ে হিয়া আর দুই বছরের ছেলেকে নিয়েই তিনি স্বামীর দুর্ঘটনার খবর শুনে হাসপাতালে আসেন। সামিনা বলেন, ‘আমার ওপর হঠাৎ এমন বিপদ কেন এল। বেলা ১টার দিকে একজন আমাকে ফোনে জানান সে আহত হয়েছে। এরপর হাসপাতালে আসি। এতটা গুরুতর ভাবিনি।’

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে এস এন করপোরেশন নামে জাহাজভাঙা কারখানায় পুরোনো জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে হাবিবসহ ১২ জন কমবেশি দগ্ধ হন। এর মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনার পর বিকেলে আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আহত রফিকুল ইসলামের সামান্য পুড়েছে। তবে বিকট শব্দে তিনি কানে শুনছেন না কিছু। একই অবস্থা আরেক শ্রমিক রফিকুল ইসলামেরও। এই শ্রমিকেরা পুরোনো জাহাজটি কাটছিলেন। পাম্পহাউসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে তাঁরা জানান।

দুর্ঘটনার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসা এক রোগীর স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। আজ বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যারা বেশি দগ্ধ হয়েছেন, তাঁরা সবাই পাম্পহাউসে ছিলেন। আমি পাশে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায়। আমি শব্দে বাড়ি খেয়ে পড়ে যাই। এরপর কানে কিছু শুনছি না।’

তাঁর পাশের শয্যায় আছেন কক্সবাজারের মহেশখালীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। সাইফুল বলেন, ‘যেভাবে শব্দ হয়েছে তাতে আমার কান ব্যথা হয়ে গেছে, কানে শুনতে পারছি না। বেশি ক্ষতি হয় যাঁরা পাম্পহাউসের ভেতরে ছিলেন।’

বেলা দেড়টার দিকে একে একে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আহতদের ১০ জনের শরীরের ২৫ থেকে ৯০ ভাগ দগ্ধ হয়। বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. রায়হানুল কাদের বলেন, ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আহমেদ উল্লাহ (৩৯) ও জাহাঙ্গীরকে (৪৮) পাশাপাশি শয্যায় রাখা হয়েছে। দুজনেরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। আহমেদের ৯০ ভাগ এবং জাহাঙ্গীরের ৭০ ভাগ পুড়েছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তাঁরা। এস এন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বরকত উল্লাহ তাঁদের চিকিৎসা তদারক করছিলেন।

বরকত উল্লাহ বলেন, ‘যে জাহাজটি কাটা হচ্ছিল তার সব ধরনের কাগজপত্র ছিল। সব নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েই জাহাজ কাটা হচ্ছিল। তারপরও এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হবে। আহতদের চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি করছি না।’

বিকেল ৫টার দিকে একে একে আটজনকে ঢাকার উদ্দেশে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিয়ে যাওয়া হয়। বার্ন ইউনিট থেকে এক এক করে রোগীর ট্রলি বের হচ্ছিল। শরীরের ৪০ ভাগ পুড়ে যাওয়া হাবিবের ট্রলি ধরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। সামিনা ও হিয়াদের কপালে কী আছে, তা সময় বলে দেবে।