টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে পুরোদমে ইলিশ শিকারে নেমেছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার জেলেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীতে এখন ডিমভর্তি মা ইলিশ ও জাটকা ধরা পড়ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে কম।
ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে দৌলতদিয়া মাছবাজারে দেখা যায়, ইলিশের বেচাকেনা চলছে। ব্যবসায়ীরা জানান, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ২০০ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন এক বেলায় ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ইলিশের পেটভর্তি ডিম এবং জাটকা আছে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় ইলিশ কম ধরা পড়ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। রাতভর শিকার শেষে ভোরেই ঝুড়িভর্তি ইলিশ নিয়ে মহাজনের আড়তে ঢেলে দিচ্ছিলেন জেলেরা। দাম কিছুটা কম হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে পছন্দমতো পদ্মার ইলিশ কিনছেন।
রাজবাড়ীর রাজাপুর থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে ইলিশ কিনতে এসেছেন সেলিম প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে আত্মীয় এসেছেন। তাঁরা পদ্মার ইলিশ খেতে চেয়েছেন। গতকাল খবর পেলাম, ঘাটে অনেক ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই নিজেদের জন্য আর কিছু মেহমানদের জন্য ইলিশ কিনছি। তবে বেশির ভাগ ইলিশের পেটে ডিম আছে।
ফরিদপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরির সুবাদে মাগুরায় থাকতে হয়। দুই দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছি। স্ত্রীর কথামতো দুজনে সকালেই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাটে এসেছি পদ্মার ইলিশ কিনতে। দাম তুলনামূলক কম। ছোট জাটকা ও মাঝারি আকারের ইলিশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে কিনেছি।’
সালাম খাঁ নামের এক জেলে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে নামেননি। অনেকে তখন চুরি করে ইলিশ ধরতেন। এখন কোনো ঝামেলা ছাড়াই মাছ দরা যাচ্ছে। দুই দিনে দুই মণের মতো ইলিশ পেয়েছেন। গত বছরের চেয়ে এ বছর কিছু কম বলে মনে হচ্ছে। সারা বছর আড়তদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয়। তাই মাছ পাওয়ামাত্র সব মহাজনের আড়তে দিতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লার মতে, ১৩ অক্টোবর ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন আগে থেকে নিষেধাজ্ঞা দিলে ভালো হতো। নিষেধাজ্ঞার আগে জেলেরা অনেক ইলিশ শিকার করেছেন। আর তখনো ইলিশের পেটভর্তি ডিম ছিল। এখন বেশির ভাগ জাটকা ধরা পড়ছে।
আজ সকালে ৩০ মণের মতো ইলিশ বিক্রি করেছেন রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, গত দুই দিনে বেশ ভালো ইলিশ ধরা পড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ২০০ মণ ইলিশ এই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ১১ জন বড় আড়তদার রয়েছেন।
রেজাউল করিম আরও বলেন, ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ টাকা, এর চেয়ে ছোট জাটকা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
দৌলতদিয়া মাছবাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি মোহন মণ্ডল জানান, আজ সকালে তিনি ৯ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি করেছেন। আর হয়তো আর দু-তিন দিন এমন অবস্থা থাকতে পারে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। এখন ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা ধরা পড়ছে। কয়েক দিন পর এ বিষয়ে অভিযান শুরু করা হবে।