যুবলীগের সাবেক নেতা হত্যায় অংশ নেয় ১০–১৫ জন, সংবাদ সম্মেলন করবেন সংসদ সদস্য

যুবলীগের সাবেক নেতা হত্যার ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে এলাকাবাসীর ভিড়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবলীগের সাবেক নেতা খাইরুল আলমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে ১০ থেকে ১৫ জন অংশ নেয়। বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত খাইরুল আলম ওরফে জেমের ওপর হামলা করে। এ সময় তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে তারা। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মারা যান। তিনি শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। খাইরুল আলম জেলা যুবলীগের সাবেক সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক।

খাইরুল আলম

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন আজ সকালে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। আমাদের সঙ্গে বাদীপক্ষের যোগাযোগ চলছে। লাশ হস্তান্তর ও দাফনের পর দুপুরের দিকে মামলা দায়ের হতে পারে।’

আজ সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অনেক লোকজন সেখানে ভিড় করেছেন। হাসপাতালে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম চলছে। হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন খাইরুল আলমের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম। হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছুই বলতে চাই না। গত ৯ বছর থেকে অনেক বলেছি। কিছুই হয়নি। অনেক সংবাদও হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি, যা বলার প্রেস ব্রিফিংয়ে এমপি সাহেব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ) বলবেন।’

যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরের দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য জানাব।’

হত্যাকাণ্ডের পর স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে গতকাল রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ। তিনি তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। দীর্ঘদিন থেকে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খাইরুলকে মেরে ফেলার ও ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান ও স্থানীয় নেতা লিটন ১০ জনকে হত্যা করা হবে হুমকি দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় প্রথম ছিল খাইরুলের নাম। তারই ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকাণ্ডে।

এদিকে খাইরুল আলম ১৫ এপ্রিল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক একটি লাইভ করেন। সেখানে তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘...চাকরিটা আপনার অবৈধ। আপনি সেই জাল সার্টিফিকেট নিয়ে ... হয়েছেন। স্বপ্ন দেখছেন আইজিপি হওয়ার। আপনি হন, সেখানে আমার দেখার বিষয় নয়। আমাকে গুলি করে মেরে ফেলে দেন, আমি মেনে নেব। জেলখানায় ভরে দেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে। যদি না করেন, আমিও আপনাকে বলছি, ওই গ্রামের সমস্ত নারী-পুরুষ নবাবগঞ্জ শহরে এসে অনশন করবে এবং দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে...।’

ফোন না ধরায় পুলিশের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

যা বলল পুলিশ

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানায় প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক বিরোধ থেকে হয়ে থাকতে পারে। আসামি ধরার জন্য অভিযান চলছে। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে ১০ থেকে ১৫ জন মত অংশ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সেগুলো পেলে ও মামলার এজাহারের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে।

অভিযোগ উঠেছে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জড়িত আছেন। এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কিনা জানেত চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ মুহুর্তে আমরা তা বলতে চাচ্ছি না। ’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন, পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় খাইরুল আলম হত্যার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম সাহিদ বলেন, ‘এ অভিযোগ ঠিক না। আমরা সব সময় তৎপর আছি। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’