দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ। গত ৫ নভেম্বর এ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থী হিসেবে ৩ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছিলেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাপার শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন টানা দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তিনি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদপন্থী হিসেবে পরিচিত। রওশনপন্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ না করায় জিয়াউল হক মৃধাও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
জিয়াউল হক মৃধা আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কয়েকজনের (রওশনপন্থী) দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ফোরামের মধ্যে মিটিং হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নেব—কী করা যায়।’ পরে বেলা ১২টার দিকে জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা (রওশনপন্থীরা) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কিনা পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক মৃধা ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী জোটের প্রার্থী হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্য জোটের প্রধান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে (ধানের শীষ) প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী হন।
আমাদের কয়েকজনের (রওশনপন্থী) দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ফোরামের মধ্যে মিটিং হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নেব—কী করা যায়।জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে তাদের দলীয় কোনো প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন জিয়াউল হক। তখন তাঁর মেয়ের জামাতা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দেওয়া হয় লাঙ্গল প্রতীক। তবে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জিয়াউলও পরাজিত হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হন আবদুল হামিদ। জিয়াউল হক হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। পরে জিয়াউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া মারা যান। গত ৫ নভেম্বর এ আসনে পুনরায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও জাপার প্রার্থী হন আবদুল হামিদ আর জিয়াউল হক হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম ৬১ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াউল হক পান ৩৭ হাজার ৩৬১ ভোট। আর জাপার আবদুল হামিদ ৩ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুটি উপনির্বাচনে আমিই এখানে দলের মনোনিত প্রার্থী ছিলাম। আসন্ন নির্বাচনেও আমি দলের প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করব।’
জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (জিয়াউল হক) দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তিনি এখন দলের সদস্য নন। এখন তাঁর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’