মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ইনস্টিটিউট–সংলগ্ন নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়ক অবরোধ করা হয়। এতে ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার একই দাবিতে ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে এই নিয়ে গত দুই বছরে তৃতীয় দফা আন্দোলন করছেন তাঁরা।
আজ বেলা দুইটা থেকেই শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের ফটকের সামনে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা নগরের বাদশা মিয়া সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘দাবি মোদের একটাই, চারুকলা ক্যাম্পাসে চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই, ২৩০০ একরে জায়গা চাই’, ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, চারুকলা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন।
জানতে চাইলে আন্দোলনরত ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারুকলা স্থানান্তর ও বৈষম্যের পেছনে দায়ী ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা। তাঁদের সদিচ্ছার অভাবের কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই।’
খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, মূল ক্যাম্পাসে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাঁরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আপাতত অবরোধ চলবে।
বক্তব্য জানতে চেয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস স্থানান্তরের দাবির সঙ্গে কেউ দ্বিমত করেছেন বলে তাঁর জানা নেই। তবে মূল ক্যাম্পাসে আনতে হলে সময় প্রয়োজন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।
শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দাবিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলা ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে হামলা চালান নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এরপরও শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন। তবে একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে গত বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। পরে গতকাল থেকে তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করেছেন।