সয়াবিনের নতুন দুটি জাত নিয়ে গবেষণা দলের প্রধান আবদুল করিমের সাক্ষাৎকার

বিইউ সয়াবিন-৩ ও বিইউ সয়াবিন-৪। অতিমাত্রায় লবণসহিষ্ণু সয়াবিনের নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এই গবেষণা দলের প্রধান কৃষিতত্ত্ববিদ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল করিম। জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে জাত দুটির অনুমোদন পাওয়া গেছে। সয়াবিনের নতুন দুটি জাত উদ্ভাবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

আবদুল করিম
প্রশ্ন

সয়াবিনের নতুন দুটি জাত উদ্ভাবনে সাফল্য পেয়ে কেমন লাগছে?

আবদুল করিম: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানও। আমরা কৃষকদের কথা চিন্তা করেই নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের সিদ্ধান্ত নেই। কৃষকদের জন্য ভালো কিছু করতে পারলে আমরা তৃপ্তি পাই। বিশ্ববিদ্যালয়েরও সুনাম হয়।

প্রশ্ন

সয়াবিনের নতুন দুটি জাতের জন্য কবে থেকে গবেষণা শুরু করেছেন?

আবদুল করিম: আমাদের এই গবেষণা দলের প্রধান ছিলাম আমি। আমার সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রভাষক সাদ্দাম হোসেন ও আপেল মাহমুদ। এ ছাড়া আমাদের ১২ জন শিক্ষার্থী বিভিন্নভাবে এই জাত দুটির গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন।

প্রশ্ন

জাত দুটির গবেষণা শুরু করেছিলেন কবে থেকে?

আবদুল করিম: ২০০৫ সালে সয়াবিনের তিনটি জাত নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০১৯ সালে গবেষণার কাজ শেষ হয়। ওই বছরই মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করি। দেশের তিনটি জেলার ৭টি উপজেলার ১৪ জন কৃষকের ৫০ শতাংশ করে জমিতে এর চাষ শুরু করা হয়। ফলন পাওয়ার পর দেখা যায়, দুটি জাতের ভালো ফলন হয়। একটিতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন

দেশে সয়াবিনের আরও কমপক্ষে ১৫টি জাত আছে। সেগুলোর সঙ্গে এই দুটির পার্থক্য কী?

আবদুল করিম: দেশে আরও জাত আছে; যেমন বারির ৭টি, বিনার ৫টি, বিইউ সয়াবিন-১ ও বিইউ সয়াবিন-২। এসব জাত অতিমাত্রায় লবণাক্ত এলাকায় চাষাবাদের উপযোগী নয়। কিন্তু নতুন এই জাত দুটি সেখানে চাষ করা যাবে।

প্রশ্ন

সয়াবিনের নতুন দুটি জাতের বৈশিষ্ট্য কী?

আবদুল করিম: উপকূলীয় অঞ্চলের অতিমাত্রায় লবণাক্ত এলাকায় সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন জাত দুটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ফলন বেশি হবে। আমাদের দেশে সয়াবিনের বেশি ব্যবহার হয় পশুখাদ্যে। যে কারণে কৃষক ও পশুখাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বড় দানার সয়াবিন পছন্দ করে। এই জাত দুটির দানা অনেক বড়।

প্রশ্ন

জাত দুটি চাষাবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হবেন কি?

আবদুল করিম: বড় দানাবিশিষ্ট সয়াবিনের জাত দুটির উপযোগিতা যাচাইয়ের সময় দেশের অন্যান্য জাত প্রতি হেক্টরে ২০০ থেকে ৪০০ কেজি ফলন দিয়েছে। সেখানে নতুন দুটি জাতের সমপরিমাণ লবণাক্ততায় ফলন ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি। বিইউ সয়াবিন-৩ ও বিইউ সয়াবিন-৪ জাত দুটির এক হাজার বীজের ওজন যথাক্রমে ২২০ গ্রাম ও ২২৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যেকোনো জাতের চেয়ে বেশি। দুটি সয়াবিনের জাতে প্রোটিনের পরিমাণ ৪২ ও ৩৯ ভাগ, তেল ১৯ ও ১৭ ভাগ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ১২ দশমিক ৬ ও ১১ দশমিক ৫ এবং ট্রিপসিন ইনহিবিটর ৩০ দশমিক ৩ ও ৪৩ দশমিক ৩৮ মিলিগ্রাম।

প্রশ্ন

বছরের কোন সময়ে জাত দুটি চাষ করা হয়?

আবদুল করিম: কৃষকেরা বছরে দুবার এই দুই জাতের চাষাবাদ করতে পারবেন। বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু করলে ফল পাবেন এপ্রিলে। আবার অক্টোবরে চাষ শুরু করলে ফলন পাবেন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে।