ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচকানাচ পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচকানাচ পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে

উচ্চ শব্দে নির্বাচনী প্রচার, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি 

অনেক বর্ষেই চলছে পরীক্ষা। দিন-রাত উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ে পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

এক সপ্তাহ বাদেই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীরা নগরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। চলছে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিংও। মাইকে বাজছে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে তৈরি করা গান। পাশাপাশি প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ট্রাকবহর নিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা চলছে। অনেক বর্ষেই চলছে ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা। আবার অনেকের সামনে চাকরির পরীক্ষাও রয়েছে। দিন-রাত উচ্চ শব্দে মাইকিংয়ে পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাশাপাশি সাধারণ ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন এবং ১৩টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৬৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছে সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার মতো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দিন-রাত নির্বাচনী প্রচারণার মাইকিং ও উচ্চ শব্দের গানে পরীক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেন না। প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, শ্রেণিকক্ষ এমনকি মসজিদের সামনের সড়কগুলো দিয়ে তাঁরা শোডাউন ও মিছিলের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়াসহ সড়কগুলোয় চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচকানাচে পোস্টার ও ব্যানারের ছড়াছড়ি। অনবরত ট্রাকবোঝাই করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের ভোটারের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। তার জন্য হলের সামনে দিয়ে এত প্রচারণার কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেটি মনে রেখে প্রচারণা করা উচিত। উচ্চ শব্দের প্যারোডি গান এবং মাইকিংয়ের ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি এখন চরম পর্যায়ে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ভাড়া করা অটোরিকশার চালকদের আবাসিক হলসংলগ্ন সড়কে মাইক না বাজানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রচারণার ক্ষেত্রে শোডাউন বা মিছিল বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল থেকে রোজী জামাল হল পর্যন্ত বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো ধরনের উচ্চ শব্দ ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোর বিষয়টি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, আমাদের শিক্ষকদেরও অসুবিধার কারণ। একাধিক প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থক মিলিয়ে অনেক মানুষ জড়িত থাকায় বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একাধিকবার নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচার ও প্রচারণা করা একজন প্রার্থীর সাংবিধানিক অধিকার। দেশের আইন মোতাবেক নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা করার সম্পূর্ণ অধিকার তাঁদের রয়েছে। ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁদের ভোটার আছে, এ জন্যই তাঁরা প্রচারণা করছেন। তবে আমরা তাঁদের বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বাদ্যযন্ত্রগুলো কম বাজানোর অনুরোধ করেছি।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আলমগীর কবীরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের অসুবিধার বিষয়টি জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। সমস্যার যথাযথ সমাধানের চেষ্টাও করা হবে।’