ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন

দলছুট সাত্তারের পথ পরিষ্কার, আওয়ামী লীগে অসন্তোষ

বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞা
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে শুরু থেকে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞা। আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী গতকাল শনিবার নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে সাত্তারকে নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে এখন পর্যন্ত তাঁর দেখা মেলেনি।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, সরকারি দল আবদুস সাত্তারকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে এসেছে। ‘ক্ষমতার লোভে’ আবদুস সাত্তারও ক্ষমতাসীনদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। তাঁদের বাধ্য করা হয়েছে। সরকারই এখানে সাত্তারকে জয়ী করতে চাইছে। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।

গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের নেতৃত্বে রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তাঁরা হলেন—জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন এবং স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম।

এই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী একাধিকবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বললেও এখন তাঁরা বলছেন, ‘ভাঙা নির্বাচনে’ তাঁরা অংশ নেবেন না। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিবেন। তাই এই নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় উকিল আবদুস সাত্তারের জয়ের পথ অনেকটাই সহজ হয়েছে। এখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। এর বাইরে এই আসনে আরও দুই প্রার্থী হলেন জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। যদিও এলাকায় তাঁদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই।

জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বলেন, নির্বাচনী এলাকায় রব উঠেছে যে আবদুস সাত্তারকে এমপি বানাতে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে নিয়েছে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ যাকে ভোট দেবেন, সেই নির্বাচিত হবেন। সাত্তারকে আলাদাভাবে নির্বাচিত করার সুযোগ কোথায়? আর ২০২৪–এর নির্বাচনের প্রস্তুতি হলো আগামীর এই নির্বাচন। এই উপনির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এখানে ওমুককে বাদ দিয়ে তমুককে ঘোষণা দিয়ে দেবে এমন সুযোগ নেই।

উকিল আবদুস সাত্তার ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দলটির নেতা মো. মঈন উদ্দিন। তিনি আবদুস সাত্তারের কাছে আট হাজার ভোটে হেরে যান। জিয়াউল হক মৃধা হন তৃতীয়।

এবার উপনির্বাচনে দলটির নেতা মঈন উদ্দিন ও মাহবুবুল বারী চৌধুরীকে ঘিরে সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যে আবহ তৈরি হয়েছিল, তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারে তাতে এখন ভাটা পড়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন আর নির্বাচনী প্রচারণায় নেই।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলাকে বলেন, আবদুস সাত্তার, মঈন উদ্দিন ও মাহবুবুল বারী চৌধুরীর মধ্যে লড়াই হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হচ্ছে না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। তাঁরা বলেন, বাকি যে প্রার্থী আছে, তাঁদেরও বাধ্য করে প্রত্যাহার করানো হবে। শেষ পর্যন্ত সাত্তারের সঙ্গে জাপার প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানীকে মাঠে রাখবে সরকার। যাতে সাত্তারের জয় পথে সুনিশ্চিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে বলে জানান তাঁরা।

গতকাল বিকেলে আবদুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল ইসলাম ভূঞা তুষার সরাইল উপজেলা সদরে আসেন। কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে এলাকা ত্যাগ করেন তিনি। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার আমি ব্যক্তিগত কাজে সরাইল উপজেলা সদরে গিয়েছিলাম। প্রতীক পাওয়ার পর প্রচারণায় নামব। বাবা অসুস্থ। একটু সুস্থ হলেই তিনি চলে আসবেন।’