ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ১৫ জনের কাছ থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের নতুনবাজার এলাকায় ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শ্রীনগর গ্রামে তৌফিকুর রহমান নামের ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য। এ সময় অন্য ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে তৌফিকুর রহমান বলেন, ভিসা আবেদনকেন্দ্রের কার্যালয় ঢাকার গুলশানে। কক্সবাজারের রামু উপজেলা খুনিয়া পালং ইউনিয়নের এম এস আজিজুল হক নামের এক ব্যক্তি এজেন্সির মালিক। তাঁর স্ত্রী সাফরিন হক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত। ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. ইউনুস নামের এক ব্যক্তি। কথা ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীর ইচ্ছা অনুযায়ী ইউরোপে পাঠানোর। দুই বছর আগে এজেন্সির চাহিদামতো ভৈরবের ১৫ জন টাকা পরিশোধ করেন; কিন্তু তাঁদের কাউকে ইউরোপের কোনো দেশে পাঠাতে পারেননি। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।
তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার ভাগনে ছাড়াও শ্রীনগর গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে রুস্তম আলী, আবদুল হামিদ মিয়ার ছেলে মো. ইব্রাহীম মিয়াসহ সাতজনের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা নেন এজেন্সির মালিক। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ১২ মার্চ ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ৭ জনকে ভারত ও নেপাল নিয়ে যান। ভিসা জালিয়াতির কারণে শেষে জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে ২৮ জুন ভারত থেকে তাঁদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে এজেন্সির মালিক পরবর্তী সময়ে আর কোনো উদ্যোগ নেননি। এখন টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। ফোন ধরছেন না।’
শ্রীনগর গ্রামের তারেক মিয়া, আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে অন্তর মিয়া, আওয়াল মিয়ার ছেলে মোবারক মিয়া ও কিবরু মিয়ার ছেলে অন্তর মিয়ার কাছ থেকে এজেন্সি মালিক নেন ৩৮ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারায় শেষে কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীরা গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন তালাবদ্ধ। কার্যালয়ের কেউ ফোনও ধরেন না। এ ছাড়া ৯ লাখ টাকা নিয়েছেন আরও চারজনের কাছ থেকে।
ভুক্তভোগী মামুনুর রহমান প্রতিকার না পেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে মামলা করে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে।
এক ভুক্তভোগীর স্বজন বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এজেন্সি মালিক আজিজুল হকের কক্সবাজারের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে এসেছি।’ ভুক্তভোগী উসমান মিয়ার দাবি, অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও প্রধান অভিযুক্ত আজিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে আজিজুর হকের স্ত্রী সাফরিন হক বলেন, বিদেশে পাঠানো কিংবা টাকা ফেরত দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এক ভুক্তভোগীর করা মামলাটির তদন্ত করছেন সিআইডি ঢাকা কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।