প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম থেকেই আগাম জাতের আলু চাষ শুরু করেন বগুড়ার কৃষকেরা। চলে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্ত এবার বৃষ্টিতে বিলম্বিত হচ্ছে আগাম জাতের আলুর চাষ। জমি ভেজা থাকায় চাষিরা অক্টোবরের এক সপ্তাহ চলে গেলেও আলুর আবাদ শুরু করতে পারেননি।
কৃষকেরা বলছেন, আগাম চাষ করা আলু নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বাজারে উঠতে শুরু করে। দ্বিতীয় ধাপে নভেম্বর মাসজুড়ে চলে ‘বিলম্বিত’ আলুর চাষ। এই আলু বাজারে ওঠা শুরু হয় জানুয়ারিতে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে দেশি জাতের আগাম আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তাঁদের হিসাবে, এখন পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে এক হেক্টর জমিতেও আলু রোপন করা সম্ভব হয়নি।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালো দাম পাওয়ায় বগুড়ার শিবগঞ্জ, গাবতলী, সদর, শাজাহানপুরসহ কয়েকটি উপজেলার চাষিরা তুলনামূলক উঁচু জমিতে আগাম আলু চাষাবাদ করেন। এই আলুর চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় অক্টোবরের আগেই ফসল তুলে জমি খালি করেন। অক্টোবরের প্রথম থেকেই আলু চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েন।
বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও গাবতলী উপজেলা ঘুরে দেখে যায়, এখনো বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আমনের কাঁচা-পাকা ধান। আগামী তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে আমন ধান মাড়াই শুরু হবে। এরপর চাষিরা খেতে আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তত করবেন। আগাম জাতের আলু চাষের উপযোগী জমিতে এখনো বৃষ্টির পানি জমে আছে বলে জানালেন কৃষকেরা।
শিবগঞ্জের উথলি গ্রামের আলুচাষি তরিকুল ইসলাম (৩৫) প্রতি মৌসুমে দুই-তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেন। গত মৌসুমের শুরুতে আলুর বাজার মন্দা থাকায় ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ২০ হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন তিনি। তরিকুল ইসলাম বলেন, আগাম আলুতে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু গত মৌসুমে আগাম আলু চাষ করে উৎপাদন খরচই ওঠেনি। এবার আলুর বাজার চাঙা থাকলেও ঘন ঘন বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমেছে। এতে আগাম আলু চাষ বিলম্বিত হচ্ছে।
এবার জেলায় ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানালেন বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলেবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর মধ্যে আগাম আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে খেতে আলু লাগানো শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত বৃষ্টি বিড়ম্বনায় আগাম জাতের আলু চাষ বিলম্বিত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এখানকার মাটিতে বিশেষ গুণ থাকায় আলুর ভালো ফলন হয়। চাষিরা আগেভাগে আমন ধান কাটার পর আলু আবাদের জমি প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেকেন্দ্রাবাদ গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের বলেন, এখানকার দোআঁশ ও পাললিক মাটিতে বর্ষার পানি সহজেই নেমে যায়, এ কারণে আগাম জাতের আলুর খুব ভালো ফলন হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলার টেপাগাড়ি গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, এবার আলুবীজের দাম খুব চড়া। গত মৌসুমে দেশি পাকরি জাতের আলুর বীজের দাম ছিল প্রতি কেজি গড়ে ৪০-৪৫ টাকা। কার্ডিনাল আলুবীজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা। এবার দেশি জাতের এক কেজি আলু বীজ ৫৫-৬০ টাকার নিচে মিলছে না। বিদেশি জাতের কার্ডিনাল বা হল্যান্ড আলু বীজের দামও চড়া। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার আগাম আলু চাষে পুঁজি সংকটও আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর বাজার চাঙা থাকলেও বৃষ্টি বিড়ম্বনায় আগাম আলু চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এখনো জমির আমন ধান খেতেই রয়েছে। বৃষ্টিতে খেতে জমে থাকা পানিতে আমন কাটাও বিলম্বিত হচ্ছে। এতে আগাম আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব ঘটবে।