তাইজাল হক তাজুল পেশাগত জীবনে ছিলেন সেনাসদস্য। চাকরি থেকে অবসরে এসে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। দীর্ঘ সময় আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এবার সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিএনপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপিতে। চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসনে এই কিংস পার্টি থেকে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি তিনি নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দুটি রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) চুয়াডাঙ্গায় কোনো দলীয় কার্যালয়, সাংগঠনিক কমিটি বা কার্যক্রম নেই। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার কের্টাপাড়ার বাসিন্দা তাইজাল হকের দলীয় পরিচয় হিসেবে বলা হচ্ছে, তিনি তৃণমূল বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির প্রচার সম্পাদক।
তাইজাল হক ঢাকার বনানীতে অবস্থিত ‘আরএম এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির উপদেষ্টা এবং ঢাকার মহাখালী এলাকার বাফওয়া মার্কেটে অবস্থিত ‘কন্ট্রোল গার্ড সিকিউরিটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির নির্বাচনে তিনি ২০১৬ ও ২০১৯ সালে দুই দফায় সহসভাপতি নির্বাচিত হন।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, এনপিপি, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী চারজন ও নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সব মিলে এই আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর সংখ্যা ১০।
সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট তাইজাল হক ২০১৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে তিনি আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সহসভাপতি হিসেবে পদ পান। ১৫ নভেম্বর ঢাকায় তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী, নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের কাছে গিয়ে দলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।
তাইজাল হকের আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির নেতৃত্বে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন। স্থানীয় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব আমাকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী হতে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেন। এ ছাড়া তাঁরা জেলা বিএনপির আরও জ্যেষ্ঠ দুই নেতাকে দলে ভেড়াতে এবং সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। আমরা বলে দিয়েছি, দলের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না। এরপর তাইজাল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়।’
তাইজাল হক বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। সাধারণ নির্বাচনেরও কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাঁর। তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে একেবারে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি আশীর্বাদ হিসেবে মনে করছেন তাইজাল।
সাংগঠনিক লোকজন নেই, নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা কারা করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাইজাল বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি নতুন রাজনৈতিক দল। সে কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটি এখনো গঠন করা সম্ভব হয়নি। তাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও নেই। আমি সাধারণ মানুষকে নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। জয়লাভের লক্ষ্যেই ভোটে দাঁড়িয়েছি। এ জন্য নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছি। যদি নির্বাচিত হতে পারি, ইশতেহার অনুযায়ী সব উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করব।’
তাইজালের ইশতেহারে যা আছে
ইশতেহারে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ, ভেটেরিনারি কলেজ ও প্রাণিসম্পদ গবেষণাগার স্থাপন, জিকে সেচ খালের সম্প্রসারণ, কুমার নদের বুকে রাবার ড্যাম, আলমডাঙ্গা শহরের পাশে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করে চুয়াডাঙ্গাকে মডেল জেলায় উন্নীতকরণ, মাথাভাঙ্গা নদী পুনঃখনন ও নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণ করে কৃষিকাজে সেচসুবিধা বৃদ্ধিকরণ এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবেন।