এক প্রার্থীর সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকের অভিযোগে করা মামলা এবং গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলন
এক প্রার্থীর সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকের অভিযোগে করা মামলা এবং গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলন

গোপন বৈঠকের অভিযোগে ৮ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ৬

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এক প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আট প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় পাঁচ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ শামসুদ্দিন সম্মেলনকক্ষে এ–সংক্রান্ত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তার প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা হলেন যমুনা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, এসবি রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ওমর আলী কওমি মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ও এসবি রেলওয়ে কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আবুসামা, বাহুকা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও বনবাড়িয়া পাইকপাড়া মডেল স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাচ্চু কুমার ঘোষ, জনতা ব্যাংক এস বি ফজলুল হক সড়ক শাখার জ্যেষ্ঠ প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা ও হরিয়াণা বাগবাটি স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত এবং গোপন বৈঠকের মূল আয়োজক শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর ইসলাম।

জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীর সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকের অভিযোগেটির সত্যতা মিলেছে। এ কারণে অভিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় এ–সংক্রান্ত একটি মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর উপজেলার ১০টি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করে নতুন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আট প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনের সংখ্যা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাচন আচরণবিধি ২১৩–এর ৬৯, ৭০, ৭১ উপধারা ও দণ্ডবিধির ১৭১ ধারায় এই মামলা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত প্রার্থীর কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবসহ এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ১০ জনকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে গোপন বৈঠকের আয়োজন করা ব্যক্তিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযানে চলছে। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে এ ঘটনার সঙ্গে আরও যে বা যাঁরা জড়িত, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

রোববার রাত নয়টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর বৈঠক করার খবর পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এদিন রাতে সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের বনবাড়িয়া কাদাই পার্কের ভেতরে নবনির্মিত রিসোর্টে এ অভিযান চালানো হয়। তবে পুলিশ সেখানে কাউকে খুঁজে পায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ পার্কের তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। এ ছাড়া পার্কের মূল ফটকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়। পরে ভিডিও ফুটেজ দেখে, প্রযুক্তির ব্যবহার করে ও পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর গোপন বৈঠকের সত্যতা পাওয়া যায়।

এর আগে রোববার রাতেই এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।