লাশের পাশে চিরকুটে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী’

মো. শিপু
ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহখানেক আগে এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় মো. শিপু (২৫) নামের এক তরুণের। বিয়ের দিনও ধার্য করা হয়। এরপর বিভিন্ন কারণে বিয়েটি ভেঙে যায়। পরে আজ রোববার বেলা দুইটার দিকে শিপুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিপু ওই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। লাশের পাশে একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। সেখানে তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে লেখা। পুলিশ ও স্বজনদের ধারণা, বিয়ে ভেঙে যাওয়ার অভিমান বা হীনম্মন্যতার কারণে ওই তরুণ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, সকাল থেকে শিপুর ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। সবাই ভেবেছিলেন দরজা বন্ধ করে হয়তো শিপু ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু দুপুরে খাওয়ার জন্য দরজা না খোলায় সবার সন্দেহ হয়। তাঁকে বাইরে থেকে ডাকাডাকি করেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু ভেতর থেকে শিপু সাড়া দিচ্ছিলেন না। বেলা দুইটা পর্যন্ত ডাকাডাকি করা হয়। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এলে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন স্বজনেরা। তাঁরা ঘরের আড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় শিপুর নিথর দেহ দেখতে পান।
লাশের পাশে পাওয়া আট পৃষ্ঠার চিরকুটে শিপু লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। দয়া করে আমাকে পোস্টমর্টেম করবেন না। কারণ, আমি নিজেই মারা গেছি।’

চিরকুটে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বারবার পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ করেন তিনি। চিরকুটের অন্য অংশে তিনি তাঁর ভাইয়ের সন্তানদের সম্পর্কে লেখেন, ‘আমার ভাসতি তানিশা ও আনাস আমার অনেক আদরের ছিল। তাদের মাদ্রাসায় পড়াবা।’ চিরকুটের অন্য অংশে লেখেন, ‘ভাবি, বাবা–মার প্রতি আপনি খেয়াল রাখবেন।’ চিরকুটে লেখা, ‘বাবা-মা তোমরা আমাকে মাফ করে দিবা। আমার জন্য কানবা না। আমার ঘরে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করবা। আমার ঘরে তোমরা থাকবা।’ তিনি লেখেন, ‘আমার মানিব্যাগে কিছু টাকা আছে। দোকানে কিছু টাকা পাব। সব টাকা মিলিয়ে এতিমদের নিয়ে মিলাদ দিয়ো। আমার কবর দিয়ো যেখানে ভালো হয়।’

‘চিরকুটে লেখা, ‘বাবা, তুমি শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবা। পরিবারের সবাই মিলমিশ করে থাকবা। কারও সঙ্গে ঝগড়া করবা না।’ নিজের মোবাইল তাঁর ভাইকে ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়ে শিপু লেখেন, ‘আমার মোবাইল তুমি নিপু ভাই চালাইবা। ঈদ এলে তুমি সবাইকে নতুন কাপড় কিনে দিবা।’ নিজের মৃত্যু–পরবর্তী গোসল সম্পর্কে তিনি চিরকুটে লেখেন, ‘আমাকে ভালোভাবে গোসল করিয়ে জানাজা দেবেন। এটা আমার অনুরোধ।’

মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে বলেই মনে হচ্ছে। এ ছাড়া লাশের পাশে চিরকুট পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাশ বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের দেওয়া হয়েছে।’