নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে দৃষ্টিনন্দন ‘চিনি মসজিদ’
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে দৃষ্টিনন্দন ‘চিনি মসজিদ’

সৈয়দপুরের দৃষ্টিনন্দন ‘চিনি মসজিদ’

মসজিদটির নাম ‘চিনি মসজিদ’। তবে নির্মাণকাজে চিনামাটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ‘চিনা মসজিদ’ বলেন। মোগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত মসজিদটির মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে মার্বেল পাথর। দেয়ালে দেয়ালে খোদাই করে বসানো চিনামাটির টুকরা সূর্যের আলোতে ঝিকমিক করে। বহুদূর থেকে এর উজ্জ্বলতা দেখা যায়।

এভাবেই চিনি মসজিদের বর্ণনা দিলেন মসজিদটির ইমাম ও খতিব মাওলানা সাঈদ রেজা। সোমবার কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের অবস্থান নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ এলাকায়। মসজিদের গায়ে চিনামাটির নকশায় ফুল, ফুলের টব, চাঁদ, তারা ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যায়। শুরুতে অবশ্য মসজিদটি এমন ছিল না। মসজিদসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৮৬৩ সালে টিন ও শন দিয়ে মসজিদটি গড়ে তোলা হয়। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি হাজী বাকের আলী ও হাজী মক্কু। দিন দিন মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে কিছুদিনের মধ্যে দোচালা টিনের ঘরে রূপান্তর করা হয় মসজিদটিকে।

মসজিদটি গড়ে তোলার ইতিহাস নিয়ে কথা হয় চিনি মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র হিটলার চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ গড়ে তুলতে এর নেপথ্যে রয়েছে অনেক ইতিহাস। মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিসর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা হাজী আবদুল করিম নিজের হাতে একটি নকশা তৈরি করেন। ১৯২০ সালে ওই নকশা অনুযায়ী চিনি মসজিদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

‘চিনি মসজিদের’ দেয়ালে দেয়ালে অনন্য কারুকাজ

হিটলার চৌধুরী জানালেন, এলাকাবাসীর দেওয়া চাঁদায় কলকাতা থেকে আনা হয় ২৪৩টি মর্মর পাথর। এ ছাড়া বগুড়ার একটি সিরামিক কারখানার মালিক বিনা মূল্যে ২৫ টন ভাঙা কাপ-পিরিচের টুকরা সৈয়দপুরে পাঠিয়ে দেন মসজিদ নির্মাণের জন্য। মসজিদের গাঁথুনিতে চুন ও সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রমে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নেন। গড়ে ওঠে ৩৯ বাই ৪০ ফুট আয়তনের পাকা মসজিদ।

পরে এই মসজিদের পরিসর আরও একবার বাড়ানো হয়। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নূরুজ্জামান জোয়ারদার সৈয়দপুর নিয়ে লেখা এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, মূল নকশা ও কারুকাজের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে মসজিদটি আরও ২৫ ফুট সম্প্রসারণ করা হয়। কাজটি শেষ হয় ১৯৬৫ সালে।

বর্তমান চিনি মসজিদের মূল ভবনে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। সব মিলিয়ে ৪৮টি মিনার রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য দুটি দৃষ্টিনন্দন ফটক রয়েছে। দক্ষিণ অংশে রয়েছে অজুখানা। মসজিদের মুসল্লি ও সৈয়দপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম বললেন, ‘এই মসজিদ আমাদের গর্বের স্থাপনা। দেশে এমন মসজিদ আর একটিও নেই।’

সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে পূর্ব-উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার গেলেই দেখা পাওয়া যাবে চিনি মসজিদের। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অনন্য এই মসজিদের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। মসজিদের খতিব মাওলানা সাঈদ রেজা জানান, মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের ওপর তলায় একটি অংশে পর্যটক থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।

অনন্য এই মসজিদ সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কথা বলবেন।