বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘আমাদের পেছনে স্লোগান দেওয়ার চেয়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হোন। আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। আমরা পাশে আছি। কিন্তু যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকেন, তাহলে অধিকার আদায় হবে না।’
আজ রোববার সন্ধ্যায় শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য মজুরিবিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন আবদুল হান্নান। চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম ডক বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ।
আবদুল হান্নান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে কোনো শিল্পপতির ছেলে জীবন দেয়নি। জীবন দিয়েছেন শ্রমিকেরা। জীবন দিয়েছেন শিক্ষার্থী আর খেটে খাওয়া মানুষেরা। আমরা সবাই মিলে যেভাবে শেখ হাসিনাকে সরিয়েছি, সেভাবে আপনাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দালালেরা বিভিন্ন জায়গায় আছে। তাদের একসঙ্গেই দমাতে হবে।’
একটি পক্ষ চাঁদাবাজিতে নেমেছে উল্লেখ করে আবদুল হান্নান বলেন, ‘বিপ্লবের সময় রাজনীতিবিদেরা আন্দোলনকারীদের পাশে থাকে। আর বিপ্লবের পর তারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মেলায়। তারা জানতে চায়, আমরা কারা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা তাঁরাই, যাঁরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব। আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করব, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করব।’
চট্টগ্রাম পোর্ট এজেন্ট, স্টিভিডোর অ্যান্ড কন্ট্রাক্টরস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আলমের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় সদস্য সাগুফতা বুশরা মিশমাসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সভায় আবুল বশরকে আহ্বায়ক ও বজলুর রহমানকে সদস্যসচিব করে চট্টগ্রাম ডক বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বক্তারা বলেন, ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও বন্দরের শ্রমিকদের কোনো ঝুঁকি ভাতা নেই। শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক এলাকা নেই। আন্তর্জাতিক বন্দর হলেও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা নেই। দুর্ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নেই। তাঁদের জন্য কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সরঞ্জাম নেই। এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকি ভাতা, উৎসব ভাতাসহ সব ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, যাঁরা বন্দরে ব্যবসা করেন, তাঁরা ১০ শতাংশও শ্রমিকদের জন্য খরচ করেন না। শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের করা আইন বাতিল করে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সাগুফতা বুশরা মিশমা বলেন, চুক্তি করেও সেই চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সেসব চুক্তি নবায়ন ও শ্রমিকদের সব ন্যায্য দাবি আদায়ে চেষ্টা করা হবে।