ঝোপ থেকে উদ্ধার নবজাতককে নিজের দাবি তরুণীর, অতঃপর যা বললেন

নবজাতক
প্রতীকী ছবি

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় একটি মসজিদের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে নিজের সন্তান বলে দাবি করেছেন এক তরুণী (১৯)। তবে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় নবজাতককে আরও চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসকদের হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল বুধবার ভোরে একটি ঝোপে নবজাতক কন্যাশিশুটিকে দেখতে পান স্থানীয় এক গৃহবধূ। পরে ওই নবজাতককে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওই দিন দুপুরে এক দম্পতি শ্রীপুর থানায় এসে নিজেদের ওই নবজাতকের মা-বাবা দাবি করেন। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী এসে নিজেকে শিশুটির প্রকৃত মা বলে দাবি করেন। বুধবার দুপুরে পুলিশের কাছে এসে যে নারী শিশুটি তাঁর বলে দাবি করেছিলেন, এই তরুণী সেই নারীরই ছোট বোন।

তাহলে দুই বোন কেন নিজেদের শিশুটির মা দাবি করলেন! আজ দুপুরে উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের বৈঠকে ওই তরুণী তাঁর দাবির সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। বৈঠকে ছিলেন মুসাফির নজরুল নামের স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনি জানান, ওই তরুণী দাবি করেছেন, একই এলাকার একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। বিয়ের আগেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ওই তরুণীর বড় বোন নিঃসন্তান। এ কারণে তিনি সন্তানটি নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন, তিন দিন আগে বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবেই নবজাতকের জন্ম হয়। তবে ওই তরুণীর যেহেতু বিয়ে হয়নি, তাঁরা লোকলজ্জার ভয়ে নবজাতককে বুধবার ফজরের নামাজের সময় মসজিদের পাশে ঝোপের মধ্যে রেখে আসেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, নবজাতকের কান্নার শব্দে মসজিদের ইমাম এসে শিশুটিকে উদ্ধার করবেন। এরপর ইমাম যখন ঘোষণা দেবেন, সবার আগে তরুণীর বোন গিয়ে নবজাতকটি দত্তক নিয়ে নেবেন। তবে ইমামের আগে স্থানীয় এক গৃহবধূ প্রথম দেখতে পাওয়ায় এসবের কিছুই হয়নি। যে কারণে তাঁরা পরে থানায় যোগাযোগ করেছেন।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে নবজাতকের মা দাবি করা তরুণী আসলেই তাঁর জন্মদাত্রী কি না, সেটা নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। নিশ্চিত না হওয়ার আগপর্যন্ত ওই নবজাতককে হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. আশরাফুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতকটি সুস্থ আছে। শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখেছেন। সে এখন আমাদের উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে আছে।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামানন্দ কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, নবজাতকটির নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে ছয়জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অন্যান্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানার চেষ্টা করা হবে, নবজাতকের মা দাবি করা তরুণী আসলেই তাঁর মা কি না। তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওই তরুণীকে নবজাতকের কাছে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তিনি এখন পলাতক। আজকের সভায় ওই যুবককে খুঁজে বের করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর মা দাবি করা তরুণী, তাঁর বোন ও বোনের স্বামীকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। তবে তাঁদের নবজাতকের সঙ্গে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম আকরাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই তরুণীর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নবজাতকের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে ওই নবজাতককে দত্তক হিসেবে পেতে অন্তত ১৭টি পরিবার ইতিমধ্যে আবেদন জানিয়েছে।