উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এ কারণে উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এমনকি কোথাও কোথাও প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারমুখী আচরণও লক্ষ করা যাচ্ছে।
তৃতীয় ধাপে আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ হবে ২৯ মে। গতকাল রোববার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। প্রত্যাহার শেষে আনোয়ারায় ৩ জন, পটিয়ায় ২, বোয়ালখালীতে ৭ ও চন্দনাইশে ৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। দু–একজন দলবিহীন হলেও বেশির ভাগ প্রার্থীই মূলত আওয়ামী লীগের নেতা।
এর মধ্যে আনোয়ারায় নির্বাচনী উত্তাপ বেশি ছড়িয়েছে। এখানকার তিন প্রার্থী সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট। সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন উপজেলা কমিটির সভাপতি আবদুল মান্নান চৌধুরী। এ ছাড়া বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীও সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এই দুজনের বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক। তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের প্রার্থী হিসেবে যথেষ্ট সমীহ আদায় করেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটিতে এত দিনের পদবঞ্চিত নেতারা মোজাম্মেলের পক্ষে এককাট্টা হয়েছেন। সাইফুজ্জামান ঘরানার দুই প্রার্থীর বিভেদের সুযোগও পাচ্ছেন তিনি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন এখন বস্তুত সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। জানতে চাইলে কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আনোয়ারার মানুষ অবহেলিত ও বঞ্চিত। এত দিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। এখন যেহেতু একটা পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষ মুখ খুলছেন। যদি সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হয়, তাহলে ব্যালটের মাধ্যমে তাঁরা এর জবাব দেবেন। আনারস প্রতীকের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন।
মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আবদুল মান্নান চৌধুরী। তৌহিদুল হকের প্রতীক দোয়াত কলম। জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, এলাকার লোকজন সংসদ সদস্যের (সাইফুজ্জামান) সঙ্গে আছেন। মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দেবেন তাঁরা।
পটিয়া উপজেলায় গত সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা এককাট্টা হয়েছিলেন তখনকার হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিপক্ষে। সেবার মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে সংসদ সদস্য করার ক্ষেত্রে এই ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের ভূমিকা ছিল। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এসে সেই ঐক্য ভেঙে গেছে। এখন পরস্পরের প্রতি বিষোদ্গারে লিপ্ত হয়েছেন নেতারা।
মনোনয়ন প্রত্যাহার শেষে পটিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. দিদারুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। বাকি তিন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু গত শনিবার নগরের একটি রেস্তোরাঁয় দুই প্রার্থী মো. দিদারুল আলম ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলমের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এই দুই প্রার্থীকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীসহ উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দিদারের সঙ্গে মারামারিতে জড়ানো বদিউল আলম হারুনুর রশিদের পক্ষ নিয়েছেন। বদিউল আলম বলেন, ‘আমি চাঁদাবাজদের পক্ষ নিতে পারি না। সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করব নিরপেক্ষ থাকতে। কিন্তু তিনি নিরপেক্ষ ভূমিকায় নেই।’
প্রার্থী দিদারুল আলম বলেন, ‘সংসদ সদস্য আমার পক্ষে আছেন। এ ছাড়া অন্য নেতারা আমার প্রতীক দোয়াত কলমের পক্ষে রয়েছেন।’ জানতে চাইলে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সংসদ সদস্য তো কোনো দিকে কথা বলতে পারবেন না। নিরপেক্ষ থাকার কথা। আশা করি, তিনি তা–ই থাকবেন। আমার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সবাই রয়েছেন।’
এদিকে বোয়ালখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মুখোমুখি অবস্থান করছেন। এই দুজনসহ মোট সাত প্রার্থী সেখানে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম ওরফে রাজা দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এখন দুই শীর্ষ নেতার পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঢোকার আশায় নেতারা সক্রিয় রয়েছেন মোটরসাইকেল ও দোয়াত কলমের পক্ষে।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ চৌধুরী, একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী ও প্রবাসী জসীম উদ্দীন আহমেদও রয়েছেন। অপর প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহম্মদ হোসেন। এখানেও প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভক্ত।