পরিদর্শনে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলকপি ও গাছ দেখান কৃষকেরা
পরিদর্শনে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলকপি ও গাছ দেখান কৃষকেরা

রাজশাহীতে ছত্রাকনাশকে ফুলকপির খেত নষ্ট, ক্ষতিপূরণ পেলেন কৃষকেরা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে ছত্রাকনাশকে ফুলকপির খেত নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার ১৩ জন কৃষক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের বিঘাপ্রতি ১ লাখ টাকা হিসেবে মোট ১৪ লাখ ২১ হাজার ৭০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।

উপজেলার চুনিয়াপাড়া, গগনবাড়িয়া ও সাকোয়া গ্রামের ১৩ জন কৃষক এই ক্ষতিপূরণ পান। গতকাল দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিনের উপস্থিতিতে ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের কর্মকর্তারা কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেন। ইউএনওর কার্যালয় থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণ করা হয়।

ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের স্থানীয় পরিবেশক সম্প্রতি চীন থেকে আমদানি করা ‘নিউজিম’ নামের ছত্রাকনাশক ওই তিন গ্রামের কৃষককে ফুলকপিতে ব্যবহারের জন্য দেন। এটি সাধারণত কলায় ব্যবহার করা হয়। ছত্রাকনাশকটি ব্যবহারের পর কৃষকদের ফুলকপিতে পচন ধরে। এ নিয়ে কৃষকেরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

কৃষকেরা জানান, তাঁদের ৪ একর ৬৯ শতক জমির সব ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। ক্ষতিপূরণের দাবিতে সম্প্রতি কৃষকেরা ফুলকপির খেতে মানববন্ধন করেন। সেদিন ঋণগ্রস্ত এক কৃষক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা পারভীনকে মাঠে পাঠান ইউএনও। তিনি গিয়ে ক্ষতি প্রত্যক্ষ করেন। কৃষকদের ব্যবহার করা নিউজিমেই ক্ষতি কি না, তা পরীক্ষা করতে ভালো থাকা ফুলকপির খেতেও কিছুটা নিউজিম স্প্রে করান কৃষি কর্মকর্তা। পরে দেখা যায়, নতুন করে স্প্রে করা ভালো ফুলকপির খেতও পরে নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে কৃষকদের ক্ষতি দেখে আগেই বাজার থেকে ওই ছত্রাকনাশক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট। তবে কৃষি কর্মকর্তা কিছুটা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রথম থেকে ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট তাদের নিউজিমের কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করছিল। তবে পরীক্ষামূলক ব্যবহারেও ফুলকপির ক্ষতি দেখে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে দুর্গাপুরের ইউএনও সাবরিনা শারমিন বলেন, ‘নিউজিমেই ক্ষতি নিশ্চিত হয়ে বুধবার কৃষক ও ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেটের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসি। সেখানে কৃষকেরা বিঘাপ্রতি দেড় লাখ টাকা করে দাবি করেন। কিন্তু ব্লেসিং অ্যাগ্রোভেট বিঘাপ্রতি দিতে চাচ্ছিল ৪০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ এক লাখ টাকা করে নির্ধারিত হয়। ছত্রাকনাশকে সমস্যা ছিল বলেই কোম্পানি এতগুলো টাকা দিল, নইলে তো দিত না।’

গতকাল ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার সময় ছিলেন ব্লেসিং গ্রুপের হেড অব বিজনেস মো. আল-আমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো চাইনি কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হোন। এই পণ্য অতীতে ব্যবহার করে অনেকে ভালো ফল পাওয়া গেছে। এবার কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সংগ্রহ থেকে এগুলো সরানো হয়েছে। এখন আবার পণ্যটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। কোনো সমস্যা পেলে এটা আর বাজারজাত করব না।’