২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের ব্যাংকে জমা ছিল ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁর নামে ব্যাংকে আছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর ব্যাংকে জমা বেড়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সম্পদ বেড়েছে প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদেরও।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন স্বপন ভট্টাচার্য্য। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পান স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর।
তিনটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্বপন ভট্টাচার্য্য মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েকটি খাত মিলিয়ে তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা খাতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮৬ টাকা আয় করতেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও ছেলের কোনো আয়ের উৎস ছিল না।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্বপন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছিলেন, তাঁর বার্ষিক আয় ৩২ লাখ ৯৭৮ টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আয় ছিল সংসদ থেকে ভাতা বাবদ ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮ টাকা। তাঁর স্ত্রীর আয় ছিল ১৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেওয়া
হলফনামায় স্বপন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, তাঁর বার্ষিক আয় ৩৩ লাখ ৭৮ লাখ ৮১ টাকা। প্রতিমন্ত্রীর আয় কৃষি, স্থাপনার ভাড়া, ব্যবসার লভ্যাংশ ও ব্যাংক আমানতের সুদ এবং প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সম্মানী থেকে।
প্রতিমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ আছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৪ টাকার। এই অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ব্যাংকে রাখা অর্থ, শেয়ারে বিনিয়োগ ও কোটি টাকা মূল্যের শুল্কমুক্ত গাড়ি। ২০১৮ সালে স্বপন ভট্টাচার্য্যের অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪০৮ টাকা মূল্যের। তবে বর্তমানে তাঁর ২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৫ টাকার ঋণ আছে।
হলফনামা বলছে, ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রীর স্থাবর সম্পদ (জমি ও ভবন ইত্যাদি) ছিল ২০ লাখ ৯৬ হাজার টাকার। এর মধ্যে যশোর শহরে ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যের ৮ দশমিক ২৫ শতকের জমিসহ একটি ৪ তলা ভবন, ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের রাজউকের প্লট। এ ছাড়া চার বিঘা পৈতৃক জমির উল্লেখ করা হলেও দাম লেখা হয়নি।
২০১৮ সালে স্বপন ভট্টাচার্য্যের স্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকায়। এর মধ্যে যশোর শহরে ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যের ৮ দশমিক ২৫ শতকের জমিসহ একটি ৪ তলা ভবন, রাজউকের প্লট ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও গ্রামে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি দ্বিতল বাড়ি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পূর্ববর্তী নির্বাচনের স্থাবর সম্পদ হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। তবে গত পাঁচ বছরের এসব স্থাবর সম্পদের বাজারমূল্য বেড়েছে বহুগুণ।
স্বপন ভট্টাচার্য্যের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। পেশা হিসেবে তিনি ব্যবসা ও সমাজসেবা উল্লেখ করেছেন।
স্ত্রী ও সন্তানের সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ
দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা স্বপন ভট্টাচার্য্যের স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যের অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৯২ টাকার। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তা দেখানো হয় ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪ টাকা। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৮ টাকা। তবে স্থায়ী আমানত বিনিয়োগে তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যের এক কোটি টাকার দেনা আছে।
দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে, তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যের ৬৩ শতক জমি ও রাজধানীর উত্তরায় ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ফ্ল্যাটের তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
দশম সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় স্বপন ভট্টাচার্য্যের ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্যের কোনো আয় ছিল না। কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না, ছিল নগদ ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ছেলের অস্থাবর সম্পদের বিবরণী দেওয়া হয়নি। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় ব্যবসা, বাড়িভাড়া, ব্যাংক আমানত থেকে আয় বাবদ তাঁর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৬৮ লাখ ৬১ হাজার ৫৬০ টাকা। নগদ, ব্যাংক জমা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও আসবাব মিলিয়ে সুপ্রিয়র অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪৬ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ২ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৪ টাকার অকৃষি জমি, ৭৭ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাটের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হেবাসূত্রে পাওয়া একটি ফ্ল্যাটের তথ্য দেওয়া হলেও সেটির মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।