নতুন ঘরে ওঠার আগেই স্ত্রী–ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ভাঙনে ভিটা হারানো লাল মিয়া

মা-হারা ছয় বছরের ছেলেকে কীভাবে বড় করবেন তা নিয়ে চিন্তায় লাল মিয়া। আজ শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার পশ্চিম ভূঞাপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কয়েক বছর আগে যমুনা নদীর ভাঙনে ভিটা হারান লাল মিয়া। আশ্রয় নেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার পশ্চিম ভূঞাপুর এলাকায়। সেখানে পাঁচ শতাংশ জায়গাও কিনেছেন। ওই জায়গায় ঘর তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু ঘরে ওঠার আগেই তাঁর ঘরের মানুষেরা চিরতরে বিদায় নিয়েছেন।

গত বুধবার টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ড্যাপাকান্দিতে একটি অটোরিকশা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে লাল মিয়ার স্ত্রী নার্গিস বেগম (২৫) ও শিশু ছেলে তাওহীদ (২) রয়েছে।

ভূঞাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত তাওহীদকে উদ্ধারের পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল

আজ শনিবার দুপুরে পশ্চিম ভূঞাপুরে লাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী ও শিশু ছেলেকে হারিয়ে লাল মিয়া পাগলপ্রায়। উঠানে বসে বড় ছেলে নাহিদকে (৬) জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আহাজারি করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘মা-হারা এই ছেলেরে আমি কেমনে মানুষ করমু।’

গত বৃহস্পতিবার ভূঞাপুরের মোমিনপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীকে কবর দিয়েছেন লাল মিয়া। তখন ছোট ছেলে তাওহীদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। ছেলেকে দেখতে শুক্রবার সকালে ঢাকায় যেতে চেয়েছিলেন লাল মিয়া। কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই খবর আসে তাওহীদ আর নেই। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে লাল মিয়ার কান্না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দরিদ্র কৃষক লাল মিয়ার (৩৫) নিজের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বড় ছেলে নাহিদ পশ্চিম ভূঞাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

লাল মিয়ার বড় ভাই তারা মিয়া বলেন, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই লাল মিয়ার স্ত্রী নার্গিস বেগম মারা যান। অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে পুলিশ উদ্ধার করে। আর আহত শিশু তাওহীদকে অজ্ঞাতনামা রোগী হিসেবে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত তাওহীদকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিতে বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু স্বজনদের খোঁজ না পাওয়ায় তাকে তখন নেওয়া যায়নি। পরিচয় পাওয়ার পর বুধবার রাত ১২টার দিকে ঢাকায় রওনা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাওহীদের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই দিন দিবাগত রাত দুইটায় মৃত্যুবরণ করে।