মাগুরায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তীর্থ রুদ্র (১৮) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁর বন্ধু তায়হান হোসেন ওরফে আমান (২১)। নিহতের স্বজনেরা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ যখন থানা, হাসপাতালের মর্গ ও বাড়িতে আনা হয়, তখন তায়হান উপস্থিত ছিলেন। গ্রেপ্তার করার আগে তায়হান নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মাগুরা পৌরসভার আল আমীন ট্রাস্ট মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি পুকুরের পাড় থেকে গত মঙ্গলবার সকালে তীর্থ রুদ্রের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পৌরসভার নান্দুয়ালী পশ্চিমপাড়া এলাকার নিমাই চন্দ্র রুদ্রর ছেলে। তাঁরা শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তীর্থ এবার মাগুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
গ্রেপ্তার তায়হান হোসেন একই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তায়হান মাগুরা শহরের হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা জিয়াউল ইসলামের (জিবলু) ছেলে। তায়হানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর বাড়ি থেকে নিহত তরুণের মুঠোফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পৌরসভার কাশিনাথপুর এলাকায় তায়হানের খালার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরে শহরের মোল্লাপাড়া এলাকা থেকে ওই মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তায়হান জানান, মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিতে তীর্থকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেন ও কুপিয়ে হত্যা করেন।
নিহত তীর্থ রুদ্রের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তায়হানের সঙ্গে তীর্থর পরিচয় বেশি দিনের নয়। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে সোমবার রাত ১টার দিকে তায়হানের বাড়িতে গিয়েছিলেন তীর্থর বাবা নিমাই চন্দ্র রুদ্র। তখন আমান জানিয়েছিল, তিনটি ছেলের সঙ্গে তীর্থকে মোটরসাইকেলে যেতে দেখেছেন তিনি।
তীর্থর চাচা বিপ্লব বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, “হত্যা করার পর তীর্থর মাকে ফোন করে তায়হান জিজ্ঞেস করেছিল ‘আন্টি, তীর্থ কি ফিরেছে?’ এমন কি ঘটনার পর তীর্থর লাশ যখন থানায় আনা হয়, সেখানেও তায়হান উপস্থিত ছিল। আমাদের গ্রামের বাড়ি, হাসপাতালের মর্গ সব খানেই সে গিয়েছে। তার আচরণে কখনও মনে হয়নি সে এতো বড় অপরাধ করেছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক আনাম বলেন, ‘অভিযুক্ত তরুণ (তায়হান) নিজেকে বন্ধু প্রমাণ ও সন্দেহের বাইরে রাখতে নানা রকম কৌশল করেছে। মর্গ থেকে যখন নিহতের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে পরিবারের দুজন সদস্যের পাশাপাশি অভিযুক্ত তায়হান সই করেন। তিনি একাধিকবার পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন।’