মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল ফরিদপুর বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। দাবি না মানলে ফরিদপুরের সব রুটে বাস ও মিনিবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল সংগঠনটি। তবে সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে মাইকিং করে বলা হচ্ছে, আগামীকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত ফরিদপুরের সব রুটে বাস ও মিনিবাস বন্ধ থাকবে।
তবে ১২ নভেম্বরের ফরিপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসনের ইন্ধনে এই বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে দাবি করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
এদিকে মহাসড়কে সব ধরনের ত্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক) ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের বন্ধের দাবিতে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এই ধর্মঘট ডেকেছে। অথচ সংগঠনটির পক্ষ থেকেই মহাসড়কে ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।
গত ৭ নভেম্বর ফরিদপুর বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ ত্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের বিষয়ে দাবি জানানো হয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির। সংগঠনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, দাবি মানার জন্য আজ দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত সময় আছে। তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টা আগেই বাস ও মিনিবাস বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ইজিবাইকের ছাদে মাইক লাগিয়ে বাস ধর্মঘটের ব্যাপারে জানানো হচ্ছে। নতুন বাসস্ট্যান্ডের সড়কটটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কেরই অংশ। ওই ইজিবাইকের চালক মো. রেজাউলকে (৩৬) বলেন, বাস ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাঁকে ভাড়া করেছে মাইকিং করার জন্য। তিনি সকাল নয়টা থেকে বাস বন্ধের বিষয়ে ঘোষণাটি মাইক বাজিয়ে প্রচার করছেন। তাঁকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, ভাঙ্গা রাস্তার মোড় ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মাইকিং করতে বলা হয়েছে।
যদিও রাজবাড়ী রাস্তার মোড় হলো ঢাকা–বরিশাল ও ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের সংযোগস্থল। এ ছাড়া ভাঙ্গা রাস্তার মোড় ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের অংশ। এ কাজের জন্য কত টাকা পাবেন জানতে চাইলে রেজাউল বলেন, ‘আমাকে টাকার কথা বলেনি। তবে তাঁদের কাজ আমিই করি। এ কাজের জন্য দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা তাকে দেওয়া হয়।’
সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কেন ধর্মঘটের মাইকিং করা হচ্ছে জানতে চাইলে বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির বলেন, ‘আমাদের ডিসি (জেলা প্রশাসক) বা এসপি (পুলিশ সুপার) কেউ এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ডাকেনি। আগেও আমরা দেখেছি, সময়সীমার কথা জানালে আমরা কোনো ইতিবাচক সাড়া পাই না। তাই এবার আগে থেকেই মাইকিং শুরু করেছি, যেহেতু আমাদের বাস ধর্মঘটে যেতেই হচ্ছে।’
তবে বাস বন্ধ করে বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম ঠেকানো যাবে না বলে দাবি করেছেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ইশারায় আলটিমেটামের সময়ের শেষ হওয়ার আগেই এই মাইকিং করা হচ্ছে। এর পেছনে সরকার প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত এবং হীন কর্মকাণ্ড। তবে এ কর্মকাণ্ডে জনগণের ভোগান্তি ছাড়া আর কোনো কাজে হবে না। বিএনপির সমাবেশের আসা জনস্রোত বাস বন্ধ করে রোধ করা যাবে না।