বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গভীর রাতে ছাত্রলীগের তিন কর্মী মারধরের শিকার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে গভীর রাতে ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে প্রথমে হলের একটি কক্ষে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে এবং পরে হলের সামনের মাঠে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে হল প্রভোস্ট খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে তাঁদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

নির্যাতনের শিকার তিন শিক্ষার্থী হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের রাজু মোল্লা, মো. মিলন হোসাইন ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সিফাত হাসান। তাঁরা তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আলীম সালেহীর সমর্থক। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদের নেতৃত্বে এই নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই দুই শিক্ষার্থী।

শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল গভীর রাতে খবর পেয়ে রাজু ও সিফাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মিলন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। নির্যাতনের শিকার ও অভিযুক্ত—দুই পক্ষই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

আহত রাজু মোল্লার ভাষ্য, দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি ২০০৭ নম্বর কক্ষে পড়াশোনা করছিলেন। এ সময় তাহমিদ জামানের তিনজন অনুসারী তাঁকে কক্ষের বাইরে ডেকে নেন। এরপর তাঁরা জোর করে তাঁকে ২০০৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। ওই কক্ষে তাঁর দুই সহপাঠী সিফাত ও মিলন ছিলেন। এরপর তাহমিদ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁর (রাজুর) কক্ষে কয়েকটি ধারালো অস্ত্র রাখার জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাহমিদ ও তাঁর অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হন।

রাজু বলেন, তাহমিদ ও তাঁর অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে বেসবলের ব্যাট ও জিআই পাইপ দিয়ে মারধর শুরু করেন। এ সময় সিফাত ও মিলনকেও মারধর করা হয়। এভাবে রাত দুইটা পর্যন্ত তাঁদের ওপর নির্যাতন চলে। দুইটার পর সিফাত ও তাঁকে হলের সামনের মাঠে নিয়ে আবার মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে খবর পেয়ে হল প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া সেখানে গিয়ে তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

রাজু মোল্লা দাবি করেন, মারধরের ঘটনার পর থেকে তাঁরা দুজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হলের অন্য শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে আছেন। এ ঘটনায় তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে তাহমিদ আজ দুপুরে বলেন, ‘রাজু মোল্লার কক্ষে ধারালো অস্ত্র পাওয়ায় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁকে (রাজু) মারধর করেছেন। যাঁরা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনেছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, এমন একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের সাজানো অভিযোগ করেছে। তাঁদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক ওয়াকিবহাল আছেন।’

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের একটি কক্ষে ঢুকে ছাত্রলীগের নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিফাতকে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে জখম করে হেলমেট ও মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই কক্ষে থাকা তাঁর দুই অনুসারীকেও মারধর করা হয়েছিল। তাঁদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এক যুগেও ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন আলীম সালেহী ও অন্যরা। তাঁরা উভয়ই সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় থাকলেও গত বছরের পর তাঁরা আর ক্যাম্পাসে নেই। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়িদুর রহমান ওরফে বাকি। মহিউদ্দীন আহমেদের ওপর হামলার ঘটনায় আলীম সালেহী ও তাঁর সমর্থকদের নামে মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় আলীম সালেহীসহ তিনজন ঘটনার পর গ্রেপ্তার হন। সম্প্রতি তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এদিকে হামলায় আহত হওয়ার পর মহিউদ্দীন সিফাতও এখন ক্যাম্পাসের রাজনীতি থেকে বাইরে রয়েছেন। ওই স্থান দখল করেছেন তাঁরই অনুসারী তাহমিদ জামান।

জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আগের ঘটনার জের ধরেই শনিবার রাতের ঘটনা ঘটেছে। বারবার ওই হলে এমন ঘটনা ঘটায় আমরাও বিব্রত। তবে প্রভোস্টকে বলা হয়েছে হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টি দেখছে।’