অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ

‘সে তো এল, কিন্তু জীবিত আসতে পারেনি’

মো. সালাউদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

চার মাস আগে শেষবার কর্মস্থল থেকে বাড়ি এসেছিলেন মো. সালাউদ্দিন (৩৩)। দাদি ও বাবাকে ফোনে বারবারই বলেছিলেন, রমজানের আগে বাড়ি আসবেন। সেই তিনি বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এলেনই। তবে লাশ হয়ে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হন লক্ষ্মীপুরের যুবক মো. সালাউদ্দিন। ঘটনার দুই দিন পর গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১টার পর কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স এলাকায় তাঁর লাশ এসে পৌঁছালে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাতেই পারিবার কবরস্থানে তাঁর দাফন করা হয়।

সালাউদ্দিন কমলনগরের চর লরেন্স ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লরেন্স গ্রামের মহিজল হকের বড় ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।
সালাউদ্দিনের বাবা মহিজল হক বলেন, ‘ফোনে বারবার বলেছিল, রমজানের আগেই বাড়িতে আসবে। সে তো এল, কিন্তু জীবিত আসতে পারেনি।’

স্বজনেরা জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সালাউদ্দিন। তাঁর পাঠানো টাকায়ই চলত দরিদ্র বাবার সংসার। ঘরে তাঁর বাবাসহ সৎমা, দুই ভাই ও তিন বোন আছেন।

সালাউদ্দিনের মৃত্যুর সংবাদে বৃদ্ধা দাদি হাজেরা খাতুন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি জানান, সালাউদ্দিনসহ তিন সন্তান রেখে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে তাঁদের মা জোসনা বেগম মারা যান। এরপর তাঁর বাবা রাহিমা বেগমকে বিয়ে করেন। বাড়িতে সবাই মিলেমিশেই ছিলেন। তাঁরা উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের সাহেবেরহাট গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১০ বছর আগে নদীভাঙনে ভিটেমাটি সব বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে পাশের চরলরেন্স ইউনিয়নের চরলরেন্স গ্রামে এসে বাড়ি নির্মাণ করেন।

চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল আমিন বলেন, সালাউদ্দিনের পাঠানো টাকা ও মানুষের কাছে হাত পেতে দুঃখ-দুর্দশায় মহিজলের সংসার চলত তাঁর। অভাব-অনটনের সংসারে বড় ছেলেই ছিল অন্যতম ভরসা।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। রাতে তাঁর লাশ গ্রামে আনা হয়েছে। রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন মারা গেছেন। গুরুতর আহত হন ২৪ জন। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিচ্ছিন্ন লোহার টুকরা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত।