কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা, ৭ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা ৭ ঘণ্টা ধরে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। শনিবার বিকেল সাগে ৩টার দিকে গাজীপুরের জিরানি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটার পর ছাত্রভঙ্গ হয়ে গেছেন বেক্সিমকোর আন্দোলনরত শ্রমিকেরা। এতে প্রায় সাত ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে তাঁরা ওই সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।

শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকেরা বলেন, আজ সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী ও চক্রবর্তী এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া আশপাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে সড়কে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী লোকজন দুর্ভোগে পড়েন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ, কাশিমপুর থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। দফায় দফায় বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও শ্রমিকেরা আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সড়কে বিভিন্ন স্থানে কাঠ ও ময়লা-আবর্জনা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এতে শ্রমিকেরা এলাকা ত্যাগ করলে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন।শনিবার সকালে গাজীপুরের জিরানি এলাকায়

নাওজোড় হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, সড়ক অবরোধ করায় উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সড়কে চলাচলকারীরা দুর্ভোগে পড়েন।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু তালেব বলেন, শ্রমিকেরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।

কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সড়কে বর্তমানে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা বিক্ষোভকালে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে ময়লা-আবর্জনা জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন। শনিবার সকালে গাজীপুরের জিরানি এলাকায়

অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা–বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। গত রোববার সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ কমিটির তৃতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে আরও দুই মাস জনতা ব্যাংক থেকে ঋণসহায়তা দেওয়া হবে। তারপর আর কোনো সহায়তা নয়। উপদেষ্টা কমিটির এ সিদ্ধান্তের পর ওই দিনই ১৬ কারখানায় বন্ধ ঘোষণা (লে-অফ) করে বেক্সিমকো।