বড়লেখা সীমান্তে লাশ পাওয়া চা-শ্রমিক গোপাল ভাগতির (৩৫) বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার দুপুরে বড়লেখার সমনভাগ চা-বাগানের ফাঁড়ি মোকাম বাগানে গোপালদের বাড়িতে
বড়লেখা সীমান্তে লাশ পাওয়া চা-শ্রমিক গোপাল ভাগতির (৩৫) বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার দুপুরে বড়লেখার সমনভাগ চা-বাগানের ফাঁড়ি মোকাম বাগানে গোপালদের বাড়িতে

বড়লেখা সীমান্তে লাশ পাওয়া চা-শ্রমিকের বাড়িতে নাগরিক কমিটি, হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়নি

মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে লাশ পাওয়া চা-শ্রমিক গোপাল ভাগতির (৩৫) বাড়িতে গিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তারা বড়লেখার সমনভাগ চা-বাগানের ফাঁড়ি মোকাম বাগানে গোপালদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেয়।

এর আগে নিখোঁজের এক দিন পর গত রোববার দুপুরে উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের সীমান্ত থেকে গোপালের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনার তিন দিন পার হলেও এখনো হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

আজ দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম দাশের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গোপালদের বাড়িতে যায়। দলে নাগরিক কমিটির মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রতিনিধি ফাহাদ আলম, রুমন কবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সমন্বয়ক আলী আব্বাস, মৌলভীবাজারের অন্যতম সদস্য তামিম আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার পর প্রীতম দাশ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রীতম দাশ বলেন, ‘গোপালের সঙ্গে যিনি পাহাড়ে বাঁশ কাটতে গিয়েছিলেন, তিনি জানিয়েছেন, গোপাল বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) আসছে বলে তাঁদের সতর্ক করার পর সঙ্গীরা ভয়ে পালিয়ে এলেও গোপাল পারেননি।’ প্রীতম বলেন, ভারত বাংলাদেশের পতিত স্বৈরাচারকে জায়গা দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বুকে গুলি চালাচ্ছে। এভাবে কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে না। ভারতই এ সমস্যা তৈরি করেছে। সম্প্রতি কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণ রানী দাস ও পঞ্চগড়ে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁরা আশা করছেন, সীমান্তে আর যেন কোনো প্রাণহনি না ঘটে, সে ব্যাপারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

নিহত গোপালের স্বজনেরা জানান, গোপাল মোকাম বাগানের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। মাঝেমধ্যে সীমান্তের পাহাড়ে বাঁশ কাটতে যেতেন। ২১ ডিসেম্বর সুজন ভূমিজ ও সেভেন মুন্ডা নামের দুই শ্রমিকের সঙ্গে তিনি বাঁশ কাটতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গোপাল আর বাড়িতে ফিরেননি। পরদিন ২২ ডিসেম্বর সীমান্তে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে বড়লেখা থানা–পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। মৌলভীবাজার জেলা সদরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় গোপালের স্ত্রী প্রিয়া ভাগতি স্বামীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন।

গোপালের সঙ্গে পাহাড়ে বাঁশ কাটতে যাওয়া শ্রমিক সুজন ভূমিজ বলেন, গোপাল ও সেভেন তাঁর সামনে ছিলেন। হঠাৎ গোপাল ‘বিএসএফ আসছে, বিএসএফ আসছে’ বলে চিৎকার করেন। পরে তিনি আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পালিয়ে আসেন। সেভেনও পালিয়ে আসেন বলে জানান।

মোকাম বাগানের বাসিন্দা স্থানীয় দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজিত কানু বলেন, গোপাল একসময় স্থানীয় ১০ নম্বর খাসিয়াপুঞ্জিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে পাশের জুড়ী উপজেলার জামকান্দি এলাকার অপর একটি পুঞ্জিতে কাজ পান। ২১ ডিসেম্বর গোপাল ও সেভেন একসঙ্গে পাহাড়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার বিষয়ে জানতে সেভেনকে মোকাম বাগানে আসতে একাধিকবার অনুরোধ করলেও তিনি আসেননি। বিএসএফ না অন্য কেউ গোপালকে হত্যা করল, সে ব্যাপারে তদন্ত করা প্রয়োজন।

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত গোপালের বুকে ছয়টি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বড়লেখা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত দাস। তবে এসব গুলি কোন ধরনের অস্ত্রের তা জানা যায়নি। এসআই সুব্রত বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পাথারিয়া পাহাড়ের সীমান্ত বিজিবির ৫২ ব্যাটালিয়নের আওতায় পড়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজারে অবস্থিত বিজিবির ওই ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মেহেদী হাসান মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বিএসএফের সঙ্গে তাঁদের পতাকা বৈঠক হয়। বিএসএফের গুলিতে গোপাল মারা গেছেন বলে স্থানীয়ভাবে কথা উঠেছে। এ কারণে পতাকা বৈঠকে তাঁরা বিএসএফের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। তবে বিএসএফ তা অস্বীকার করেছে।