আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে শহীদ সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম

প্রকল্পের আওতায় ক্রিকেট মাঠ, ছাউনিসহ গ্যালারি, ব্যায়ামাগার, প্যাভিলিয়ন ভবন, ড্রেসিংরুমসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হচ্ছে।

শহীদ সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম

প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পর আন্তর্জাতিক মান পেতে চলেছে বরিশালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। আগামী বছর এ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বরিশালের ক্রীড়া সংগঠকেরা বলছেন, আয়তনের দিক থেকে বরিশাল স্টেডিয়াম দেশের অন্যতম বড় ও পুরোনো হলেও এত দিন অবহেলিত পড়ে ছিল। আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবেও স্টেডিয়ামটির বিকাশ হয়নি। এমনকি, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল, ক্রিকেট এবং প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচও নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় না। এতে স্থানীয়ভাবে খেলাধুলাও ঝিমিয়ে গেছে।

১৯৬৬ সালে বরিশাল নগরের বান্দ রোড লাগোয়া কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯ একর ১৫ শতক জমির ওপর স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি আধুনিকায়ন করে নামকরণ হয় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। তবে এখন পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক আসর হিসেবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের চার দিনের ম্যাচ আয়োজনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নকাজের মধ্যে প্রথম ধাপে পাঁচটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে জানুয়ারি মাসে। কাজ শেষ হলে এই স্টেডিয়ামে নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট আয়োজন করা যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রকল্পের পরিচালক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. শাহ আলম সরদার বলেন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এবং জেলা সুইমিংপুলের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে। তবে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। কারণ, করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ইনডোর ও আউটডোর স্টেডিয়ামে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্রিকেট মাঠ, পাঁচটি পিচ, চেয়ার, ছাউনিসহ গ্যালারি, ব্যায়ামাগার, ইনডোর অনুশীলনের সুবিধা, প্যাভিলিয়ন ভবন, মিডিয়া ভবন, ড্রেসিংরুম, ডরমিটরি, ফ্লাডলাইট, সুইমিংপুল সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধনসহ একাধিক উন্নয়নকাজ করা হবে।

তবে প্রথম ধাপে পাঁচটি গুচ্ছে প্যাভিলিয়ন ভবন, মিডিয়া ভবন, ডরমিটরি, ইনডোর অনুশীলনের সুবিধা, ড্রেসিংরুম, মানসম্পন্ন ক্রিকেট মাঠ ও গ্যালারির ছাউনি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

প্রকল্পের তদারকি কাজে নিয়োজিত ক্রীড়া পরিষদের প্রকৌশলী শিবু লাল খাসকেল বলেন, স্টেডিয়ামের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকেরা এখন পুরোদমে কাজ করছেন।

বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন খান বলেন, এই প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান। তবে বরাদ্দ শ্লথ হওয়ার কারণে কাজে কিছুটা ধীরগতি আছে।

বরিশাল ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পুরোনো স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত হবে।

পরিত্যক্ত সুইমিংপুল সংস্কার সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, পরিত্যক্ত যে সুইমিংপুল আছে, সেটা সংস্কারের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে এটা সংস্কার করে তেমন লাভ নেই বলে অনেকেই মত দিয়েছেন। সংস্কারের বদলে নতুন করে নির্মাণ করার পক্ষে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সে অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।