হাঁড়িভাঙ্গা আম
হাঁড়িভাঙ্গা আম

বিক্রি বন্ধ, হাঁড়িভাঙা আম ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের এখন দেশজুড়ে খ্যাতি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এই আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হাঁড়িভাঙা আম ব্যবসায়ীদের বুকভরা আশা ছিল, এবার ব্যবসা ভালো হবে, লাভ হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না তাঁদের। অনেক আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকার আম ব্যবসায়ী তারাজুল ইসলাম।

তারাজুলের মতো আমবাগান চুক্তি নেওয়া কয়েক শ ব্যবসায়ী আম বিক্রি করা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। একই সঙ্গে যাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে আমের ব্যবসায় নেমেছেন, তাঁদের অবস্থাও সঙিন। লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তাঁরা। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত–সহিংসতার পর কারফিউ জারিসহ নানা পদক্ষেপের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার মাঠের হাট এলাকার আম ব্যবসায়ী মমদেল হোসেন বলেন, ‘এবার ৩০ লাখ টাকার ব্যবসা হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু সেই আশা আর রইল না। দেশের এ অবস্থায় বাগানের অনেক আম বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। বিক্রি না হওয়ায় অনেক আম নষ্ট হয়ে গেছে। বাকিগুলোও হয়তো নষ্ট হবে। বিশাল লোকসান হবে।’

এদিকে বিভিন্ন আমবাগানের চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করে যেসব নতুন উদ্যোক্তা অনলাইনে আম বিপণনে নেমেছিলেন, তাঁরাও দিশাহারা। তাঁরা ভেবেছিলেন, এবার আমের অনলাইন ব্যবসায় সাফল্য আসবে। কিন্তু তা হয়ে উঠল না বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

রংপুরের নারী উদ্যোক্তা কেয়া তালুকদার (৫০) আগে ঢাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করতেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফিরে আসেন রংপুরে। নতুন করে চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। অনলাইনে খাবার সরবরাহসহ নানা পণ্যের ব্যবসা করে চার বছর ধরে হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসায় ঝুঁকেছেন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে অনলাইনে আমের ব্যবসা ভালো হয়েছে। ভাবছিলাম, শেষ দিকে এসে একটা লাভ হবে। কিন্তু তা আর হলো না।’

হাঁড়িভাঙা আমের ব্যবসায় কেয়া তালুকদারের মতো ৫০ জনের বেশি নারী যুক্ত হলেও চলমান পরিস্থিতিতে তাঁরা পুঁজি হারাতে বসেছেন, এমনটাই দাবি করলেন।

গত ২০ জুন থেকে পুরোদমে হাঁড়িভাঙা আম বেচাকেনা শুরু হলেও জুলাইয়ের শেষেই হয় মৌসুমের প্রধান বেচাকেনা। রংপুর উন্নয়ন ফোরাম নামের একটি সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল হাসান বলেন, এবার শতাধিক উদ্যোক্তা এই আম ব্যবসা শুরু করলেও তাঁদের অবস্থা খুবই খারাপ। এই ব্যবসার শেষে এসে লাভ হয়, কিন্তু এবার সেটি শেষ হয়ে গেল।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার মেট্রিক টন ধরা হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, সবারই স্বপ্ন ছিল হাঁড়িভাঙা আমের ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে দেশের পরিস্থিতিতে আম ব্যবসায়ীদের সেই আশা হয়তো পূরণ হচ্ছে না।