রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানোর চার দিন আগে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
আজ সোমবার বিকেলে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে এই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, আবু সাঈদ ইবতেদায়ি শিক্ষক (সাধারণ) হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন। পরীক্ষায় তাঁর রোল নম্বর ছিল ২০১২৫৬২৯৭। বাবার নাম মো. মকবুল হোসেন। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম।
আবু সাঈদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। তাঁর বড় ভাই রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান সাঈদ। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। পরে ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন তিনি।
সংসারের অভাব ঘোচাতে আবু সাঈদ ইবতেদায়ির শিক্ষক হতে নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিল। পাসও করল কিন্তু তা নিজে দেখে যেতে পারল না। আমাদের এসব দেখে আর লাভ কি?রমজান আলী, আবু সাঈদের বড় ভাই
রমজান আলী বলেন, ‘আবু সাঈদের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও সংসারের অভাব ঘোচাতে আবু সাঈদ ইবতেদায়ির শিক্ষক হতে নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিল। পাসও করল কিন্তু তা নিজে দেখে যেতে পারল না। আমাদের এসব দেখে আর লাভ কি?’
গত ১৬ জুলাই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। যে ফটকটি পরে ‘শহীদ আবু সাঈদ গেট’ নামকরণ করেন শিক্ষার্থীরা। আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
১২ জুলাই বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০২৩-এর স্কুল (নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/দাখিল ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের মাদ্রাসা) ও স্কুল-২ (মাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, উচ্চমাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এবং কারিগরি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট) পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় কলেজ (কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিকোত্তর/উচ্চমাধ্যমিক কারিগরি/ভোকেশনাল/ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/ইনস্টিটিউট এবং আলিম ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের মাদ্রাসা) পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮০। এর মধ্যে স্কুল ও সমপর্যায়ের ৫৫ হাজার ৮৯০ জন, স্কুল-২ পর্যায়ের ৫ হাজার ৩২৩ জন এবং কলেজ ও সমপর্যায়ের ২২ হাজার ৬৫২ জনসহ মোট ৮৩ হাজার ৮৬৫ পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এনটিআরসিএ বলছে, উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরবর্তী সময়ে মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে ও এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে সেই পরীক্ষায় আর বসা হবে না আবু সাঈদের।