ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী মো. আসাদুজ্জামান নূর ওরফে তপন (২৩) হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গত বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফরিদপুর শহরতলির অম্বিকাপুর ইউনিয়নে একটি মেহগনি বাগান থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আসাদুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর বাঁ হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। হাতটি এখনো পাওয়া যায়নি। মারধরের প্রতিশোধ নিতেই হত্যার পর খুনিরা আসাদুজ্জামানের হাত কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষ।
মো. আসাদুজ্জামান ফরিদপুর শহরের মধ্য আলীপুর এলাকার প্রামাণিকপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আসাদুজ্জামান বিবাহিত, তবে তাঁর সন্তান ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার হাওলাদারকান্দী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে আসাদুজ্জামানের দাফন হয়।
নিহত আসাদুজ্জামানের ভাই মো. আবুল হাওলাদার দাবি করে বলেন, ওই এলাকায় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয় আছেন। এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রির ব্যাপারে তাঁদের বাধা দিতেন আসাদুজ্জামান। এর জেরে ওই মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁর ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এবং তাঁর বাঁ হাত কেটে নিয়ে যায়।
তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের সঙ্গেই আসাদুজ্জামান চলাফেরা করতেন। চক্রটি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে বিরোধ বাধে আসাদুজ্জামানের। এর জেরে গত মার্চে ‘জসীম পল্লি মেলার’ সময় তুষার নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করেন আসাদুজ্জামান। এলাকাবাসী জানান, এর জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেন, আসাদুজ্জামানের বাঁ হাত কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতকদের একজন বলতে থাকেন, ‘যে হাত দিয়ে আসাদুজ্জামান আমাকে মেরেছিল, আমি সেই হাত কেটে নিয়েছি। আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।’ এ সময় আসাদুজ্জামানের বন্ধু বেলায়েত (২১) ঘাতকদের সামনে পড়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে বেলায়েত পালাতে গেলে ঘাতকেরা তাঁর পিঠে কোপ দেন। বেলায়েত বর্তমানে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা বাঁ হাতটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাতটি দুর্বৃত্তরা দূরে কোথাও ফেলে দিতে পারেন। তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান মাদকাসক্ত ছিলেন। তাঁকে এ পথ থেকে ফেরানোর জন্য পরিবারের সদস্যরা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা পর্যন্ত করিয়েছিলেন।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে আজ বিকেলে তাঁরা মামলা করবেন। ওসি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’