রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার আয়োজন করে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়। মতবিনিময় সভায় মেয়র পদপ্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নানা রকম প্রশ্ন করেন, অভিযোগও করেন।
এই সভায় চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন কথা বললেও সদ্য সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন কোনো কথা বলেননি। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী সকাল সাড়ে ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির হল কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় অনেক প্রার্থী দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম দেন। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য শেষে তিনি শিল্পকলা একাডেমি ছেড়ে যান।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান, রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় প্রথমে সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের প্রশ্ন ও অভিযোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর সুযোগ পান সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁদের প্রশ্ন ও অভিযোগের উত্তর দেন নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। এরপর চার মেয়র প্রার্থীর প্রশ্ন ও বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে চারজনের বক্তব্যই শুনতে চাওয়া হয়। শুরুতে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী লতিফ আবদুল। এরপর কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুরশিদ আলম। পরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তিনি তখন বলে দেন, কোনো বক্তব্য দেবেন না। এরপর বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম।
এই তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার বলেন, রাজশাহীতে অনেক বয়স্ক ভোটার আছেন, যাঁরা মোবাইল পর্যন্ত চালান না। তাঁরা ইভিএমে ভোট দেবেন কেমন করে? এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘এই ধরনের প্রশ্ন আগেই এসেছে। আমরা এগুলো বলেছি, আপনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন বোধ হয়।’ পরে লতিফ আনোয়ার ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়েন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়ার আহ্বান জানান। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নও করেন। তিনি মোবাইলের স্ক্রিন দেখে ইভিএম সম্পর্কে বিস্তারিত কারিগরি দিকগুলো জানতে চান।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, এই নির্বাচনে যেন ভোটাররা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
পরে বক্তব্য জানার জন্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর নির্বাচনী প্রচার কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি (খায়রুজ্জামান) সেখানে গিয়ে কথা শুনেছেন। উনি যে কথাগুলো বলতে চান, তা নির্বাচন কমিশনার বলে দিয়েছেন। অপ্রয়োজনীয় কথা খায়রুজ্জামান লিটন ভাই একটু কম বলেন। এ কারণে প্রয়োজন পড়েনি, উনি কথা বলেননি। এটা নেগেটিভ কিছু না।’
কাউন্সিলর প্রার্থীদের ইভিএম নিয়েই বেশি প্রশ্ন
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এবারই প্রথম সব কয়টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিতে হবে ভোটারদের। বিষয়টি রাজশাহীর মানুষের কাছে নতুন। তাই এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে একাধিক কর্মশালা, সেমিনার করার আহ্বান জানান কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। বক্তব্য দেওয়া কমিশনারদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন প্রার্থীই ইভিএম বিষয়ে জানতে চান, নানা রকম প্রশ্ন করেন। কেউ কেউ জানতে চান, ইভিএমে একজনকে ভোট দিলে অন্যজনের কাছে চলে যায় কি না। কেউ কেউ জানতে চান, ভোট গ্রহণ শেষে গণনায় কতটুকু সময় লাগবে, ভোটের ফলাফল কেন্দ্রে কীভাবে দেওয়া হবে।
কাউন্সিলরদের আরও যত অভিযোগ
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মিলন জানতে চান, একজন প্রার্থী একটি নির্বাচনী ক্যাম্প করবেন, কিন্তু ওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে একাধিক ক্যাম্প করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেন, কাউন্সিলর পদপ্রার্থী একটি নির্বাচনী ক্যাম্প, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৩০ হাজার ভোটারের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনটি, মেয়র পদপ্রার্থী সিটি করপোরেশন এলাকায় একেকটি থানায় একটি করে নির্বাচনী ক্যাম্প পরিচালনা করতে পারবেন। এমনকি আগে থেকেই থাকা কোনো রাজনৈতিক কার্যালয়েও নির্বাচন বিষয়ে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না।
সিটি করপোরেশনে চাকরিরত ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারের অংশ নিচ্ছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে সভায়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবেন না। এ ছাড়া পোস্টার ছেঁড়া, হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করেন অনেকে। সেই বিষয়ে প্রার্থীদের নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়।