‘গার্ডারের নিচে পড়ে আমার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল’

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন জাহিদুল ইসলাম। মঙ্গলবার সকালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের আগপয়লা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

‘গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে আমার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। এটি কোনো দুর্ঘটনা হতে পারে না। এত ব্যস্ত একটা সড়কের মধ্যে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ চলছিল। এটা অবশ্যই হত্যাকাণ্ড। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

আজ মঙ্গলবার সকালে বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আগপয়লা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। রাজধানীর উত্তরায় জসীমউদ্দীন রোডের মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনে প্রাইভেট কারের ওপর বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে নিহত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (২৬) এবং দুই সন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। স্ত্রী ও দুই সন্তানদের কথা বলতে বলতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন জাহিদুল।

জাহিদুলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার দক্ষিণখানের কাওলা এলাকার মো. হৃদয়ের সঙ্গে আশুলিয়ার রিয়া মনির গত শনিবার বিয়ে হয়। গতকাল সোমবার বিকেল চারটার দিকে কাওলায় বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে নবদম্পতি হৃদয়-রিয়া, হৃদয়ের বাবা রুবেল, রিয়ার মা ফাহিমা বেগম, খালা ঝর্ণা এবং তাঁর দুই সন্তান জাকারিয়া ও জান্নাতুল প্রাইভেট কারে আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন।

উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে চলন্ত অবস্থায় গাড়িটির ওপর বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান পাঁচজন। নিহত অন্য দুজন হলেন—হৃদয়ের বাবা রুবেল ও শাশুড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ঢেংগারগড় গ্রামের ফাহিমা বেগম (৩৭)। অল্পের জন্য বেঁচে যান নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া।

জাহিদুল ইসলাম ইজিবাইক মেরামতের কাজ করেন। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে জান্নাতুল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নার্সারিতে পড়ত। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগপয়লা গ্রামে জান্নাতুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। চলছে মাতম। একটু পর পর ডুকরে কেঁদে উঠছেন কেউ কেউ। উঠানে প্রতিবেশীরা জাহিদুল ইসলামকে বাতাস করছেন।

একপর্যায়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাগনির বিয়ের জন্য গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় যাই। জরুরি কাজ থাকায় ওদের ঢাকায় রেখে গত শনিবার রাতে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। এর পর থেকে ফোনে কথা হচ্ছিল। দুর্ঘটনার দিন সকালেও ঝর্ণার সঙ্গে কথা হয়। বিকেলে বউভাত খেয়ে বাড়িতে চলে আসবে বলে তখন জানিয়েছিল ও। সেই আসা আসবে, তবে লাশ হয়ে।’

জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এখনো পুলিশ লাশ দিচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের লাশ দেওয়ার দাবি জানান।