নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দুজন নারী সদস্য এবার দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন। তাঁরা সম্পর্কে বোন। পাস করে তাঁরা বলেছেন, এখন থেকে ভোটাররা তাঁদের আর ‘আন্ডার মেট্রিক’ বলে উপহাস করতে পারবেন না।
এ দুই ইউপি সদস্য হলেন বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর দিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাসিমা বেগম (৪৮) ও একই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দিঘা গ্রামের হালিমা বেগম (৩৬)। নাসিমা বেগম বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সংরক্ষিত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও হালিমা বেগম একই ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য।
দুজনের পাস করার পেছনে নাসিমা বেগমের ছেলে সোহান হোসেনের ভূমিকার কথা বলেছেন তাঁরা। সোহানও এবার নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর নাসিমা ও হালিমা অংশ নেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ওমরগাড়ি ফাজিল মাদ্রাসার ভোকেশনাল শাখা থেকে। এর মধ্যে নাসিমা জিপিএ–৩ দশমিক ৬৪, হালিমা ৩ দশমিক ৮৯ এবং সোহান ৩ দশমিক ৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
ছেলের সঙ্গে পাস করতে পেরে উচ্ছ্বসিত মা নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মা–বাবার সংসারে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। বিয়ের পর সংসারের নানা ঝামেলায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। এই অতৃপ্তির কথা স্বামী-ছেলে জানত। তাই ছেলে যখন এসএসসির ফরম ফিলআপ করছিল, তখন স্বামী-সন্তান আমাকেও ফরম ফিলআপ করতে বলে। আমি রাজি হয়ে যাই। বাড়িতে একসঙ্গে পড়ালেখা করতাম। তবে পরীক্ষা দিয়েছি আলাদা কেন্দ্রে। আমার বোনও আমাকে দেখে পরীক্ষায় অংশ নেয়। আমরা সবাই পাস করেছি। খুব ভালো লাগছে। এখন আর ভোটাররা আমাকে “আন্ডার মেট্রিক” বলতে পারবে না।’
হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা দুই বোন একই ইউনিয়নের দুটি পৃথক এলাকা থেকে সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। এ ঘটনা তখন বেশ আলোচিত হয়েছিল। পরে বোনের ছেলে সোহানের অনুরোধে আমি ও আমার বোন ফরম ফিলআপ করে পরীক্ষায় অংশ নিই। আমাদের প্রায় একই ধরনের ফল হয়েছে। আমি এতে গর্ববোধ করছি।’
মা ও খালার সঙ্গে পরীক্ষায় পাস করার বিষয়টি অত্যন্ত মজার একটি ব্যাপার বলে মন্তব্য সোহান হোসেনের। সে বলেছে, ‘নির্বাচনের সময় কোনো কোনো ভোটার মা ও খালাকে আন্ডার মেট্রিক বলে উপহাস করেছেন। তখনই তাঁদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তাঁরা অংশ নিয়ে পাসও করেছেন। এখন ভোটাররা আর তাঁদের আন্ডার মেট্রিক বলবেন না। এই ফলাফলে আমি খুব খুশি।’