শৈশবে ছয় বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন বাদল চন্দ্র রায় (৩৬)। পরিবারের অভাব-অনটনে তখন চিকিৎসা করাতে পারেননি। চোখে ঝাপসা দেখতে দেখতে একসময় দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। প্রতিবেশী হরিদাস রায়ের কাছ থেকে একটি দোতারা কেনেন। তাঁর কাছেই তালিম নিয়ে ছোটবেলা থেকে দোতারায় সুর তুলতে তুলতে সংগীতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাদল চন্দ্র রায়ের (৩৬) জীবন চলে দোতারায় সুর তুলে, গান গেয়ে। কখনো ভাওয়াইয়া, আবার কখনো জারি-সারি, ভাটিয়ালি গান গেয়ে তাঁর জীবন চলে। বছরের পর বছর ধরে তিনি রংপুরের গ্রামগঞ্জে দোতারা বাজিয়ে মানুষকে গান শোনান। গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে যা দেন, তা দিয়েই তাঁর সংসার চলে। স্ত্রী আর তিন বছরের এক ছেলেকে নিয়েই তাঁর পরিবার।
বাদল চন্দ্র রায়ের বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের শিবেরবাজার এলাকায়। থাকেন নিজের ভিটায়। তবে তাঁর আবাদি কোনো জমি নেই। ছয় বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। এরপর গান গেয়ে মানুষের সহযোগিতায় চলেন।
পথ চলতে গিয়ে বাদল চন্দ্রের সঙ্গে দেখা সদর উপজেলার পানবাজার এলাকায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ধরলেন দোতারার সুরে ভাওয়াইয়া গান। একে একে কয়েকটি গান শোনালেন। বাজারে ভিড় জমে যায়। মাটি ও মানুষের প্রাণের গান উপভোগ করেন উপস্থিত লোকজন। এমনি করে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। গান শোনানোর পর বাদল চলে যাওয়ার সময় হলে মানুষ তাঁর হাতে কিছু টাকাপয়সা তুলে দেন।
কথা হয় বয়াতি বাদলের সঙ্গে। বললেন, হরিদাস রায় নামের এক প্রতিবেশী গান গাইতেন। দোতারা বাজাতেন। তাঁর সঙ্গে তিনি এখানে-ওখানে যেতেন। এভাবে চলতে চলতে গান গাওয়া শিখেছেন। তাঁর কাছ থেকেই একটি দোতারা কিনে নেন। ছোটবেলা থেকেই গান গাইছেন। অভাবের সংসার হলেও কারও কাছে হাত পাতেন না।
গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে যা দেন, তা দিয়েই তাঁর সংসার চলে। দিনে কেমন আয়-রোজগার হয় জানতে চাইলে বলেন, ‘৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। ঝড়বৃষ্টি হলে বাইরে যাওয়া হয় না। প্রচণ্ড রোদে দূরে যেতে পারি না। হাটবাজারে গাছের ছায়ায় কিংবা চায়ের দোকানে বসে দোতারায় সুর তুলে গান গাই।’
আর কিছু জানতে চাওয়ার আগেই দোতারায় সুর তোলেন বাদল। গাইতে থাকেন, ‘ও মুই না শুনুং না শুনুং তোর বৈদেশিয়া কথা রে, ও মোক ছাড়িয়া গেলও কেনে।’