ছাত্রলীগকে পুলিশের মারধর

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ

বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে। ১৫ আগস্ট দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে
ছবি: সংগৃহীত

বরগুনায় জাতীয় শোক দিবসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় করা কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিটি বরগুনা থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ ১৯ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান।

বাকি ১৮ জনের মধ্যে একজন পুলিশ পরিদর্শক, ছয়জন উপপরিদর্শক (এসআই), চারজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), নায়েক একজন ও ছয়জন কনস্টেবল। তাঁরা হলেন পরিদর্শক মোকলেছুর রহমান, এসআই জাহিদুল কবির, আফজাল হোসেন, মো. সাব্বির, ইলিয়াস আহমেদ, মো. মনিরুজ্জামান ও শিহাব উল্লাহ, এএসআই আবুল বাশার, ইসমাইল হোসেন, সাগর দে ও শংকর চন্দ্রশীল, নায়েক মোহাম্মদ মুসা, কনস্টেবল রাফিউল ইসলাম, মোহাম্মদ সানি, রুহুল আমিন, আবুল বাশার, ইমরান হোসেন ও ইলিয়াস হোসেন।

সংঘর্ষকালে লাঠিপেটার ঘটনা তদন্তে গত ১৫ আগস্ট রাতে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ফারুক উল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান ও বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার। পুলিশ সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি গতকাল রোববার ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ আগস্ট ঘটনার দিন এসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধ বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তাদের বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং কনস্টেবলদের ব্যাপারে জেলা পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক এই তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানোর পর আবার একটি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার বিধান আছে। সেখানে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের আবার নোটিশ দিয়ে ডেকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূলত এতে সতর্ক করা, তিরস্কার করার মতো শাস্তি দেওয়ার রেওয়াজ আছে।

২৪ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পদবঞ্চিত একটি পক্ষ। এ নিয়ে দুই পক্ষে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে প্রায় ১৫ দিন ধরে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। এরপর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা ছাত্রলীগের শোক মিছিলে আরেকটি পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে এ ঘটনার সময় ইটপাটকেলে পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এ সময় পুলিশ ছাত্রলীগের ওই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সামনেই পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এ সময় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও কর্তব্যরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

এ ঘটনায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৬ আগস্ট সকালে তাঁকে বরিশালে এবং অপর এক আদেশে ওই দিনই চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বরগুনা সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আরও পাঁচ সদস্যকে প্রত্যাহার করে অন্য জেলায় দেওয়া হয়েছে।