ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন ‘মর্মাহত’ হওয়ায় অধ্যক্ষসহ একটি মাদ্রাসার ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দুই বছর ধরে বন্ধ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দীর্ঘ সময় বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব শিক্ষক-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনাটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল (এমএ) মাদ্রাসার। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৭ জন শিক্ষক, তিনজন ল্যাব সহকারী, তিনজন তৃতীয় শ্রেণির ও ছয়জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বেতন বন্ধ রাখা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ১ সেপ্টেম্বর পুনরায় বেতন-ভাতা চালুর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পল্লিবেড়া গ্রামে ২ একর ১২ শতাংশ জমির ওপর মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালের মে মাসে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। মাদ্রাসায় চারতলা ভবন আছে দুটি, তিনতলা ভবন আছে একটি ও দুইতলা ভবন আছে তিনটি। বর্তমানে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী আছেন ১ হাজার ৩৮ জন এবং শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৫৮ জন।
২০২১ সালের ৮ অক্টোবর ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দিয়ে ‘অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীগণের বেতন–ভাতা স্থগিত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ’ করেন। ডিও লেটারে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর-৪ এর ভাঙ্গা উপজেলার ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসাটি বিএনপি সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদ্রাসার শিক্ষক–কর্মচারীরা সরকারি নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় মর্মে জানা যায়। আমি বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিষয়টির প্রতি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও কিছুসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী কর্ণপাত না করায় ও আমার আদেশের অবজ্ঞা করায় আমি দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছি। তাই অধ্যক্ষসহ নিম্নবর্ণিত শিক্ষক–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা স্থগিত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে বেতন বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত নিক্সন এ–সংক্রান্ত মোট ২১টি ডিও লেটার দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এসব ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি কার্যকর হয় ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে।
বেতন বন্ধ হওয়া দুজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য নিক্সনের এই অবৈধ পদক্ষেপের কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দুই বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী। ১ সেপ্টেম্বর আবার বেতন-ভাতা চালুর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ মৃধা। তিনি নিক্সনের পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ দাবি করে তা বাতিল করার অনুরোধ জানান।
ভাঙ্গা ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল (এমএ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর অনৈতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নির্দেশ অমান্য করায় তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়ে বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করেন। তাঁর সুপারিশের পর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন সরকার তা আমলে নিয়ে আমাদের বেতন-ভাতা স্থগিত করে দেন। আমরা নিক্সনের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কয়েক বছর মানবেতর জীবন যাপন করছি। নিক্সন চৌধুরীর কথার বাইরে গেলেই এ রকম ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হতো আমার মতো অনেকেরই।’
সরকার পরিবর্তনের পর সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী আত্মগোপনে থাকায় ও তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
ভাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিধি মেনে পরিচালিত হয়ে আসছে। মাদ্রাসা পর্যায়ে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কয়েকবার স্বীকৃতিও পেয়েছে।