গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবিটি রোববার দুপুরে তোলা
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবিটি রোববার দুপুরে তোলা

একজন শিক্ষক চালান একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে একজন শিক্ষক দিয়ে। বিদ্যালয়ের মাত্র দুজন শিক্ষকের মধ্যে একজন ছুটিতে থাকায় এক মাস ধরে এ দুর্দশা চলছে।

১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০। মাওনা ইউনিয়নের বেলতৈল ও আশপাশের বিশাল এলাকার জন্য বিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। বিদ্যালয়ে একটি বহুতল ভবন ও একটি একতলা ভবন আছে। বহুতল ভবন পাঠদানে ব্যবহৃত হয়। একতলা ভবনটি অব্যবহৃত।

গত রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সব মিলিয়ে পাঁচজন শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসে ছিলেন খায়রুল ইসলাম নামের একজন সহকারী শিক্ষক। তিনি এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। কিছুক্ষণ পর দেখা হয় আরও একজনের সঙ্গে। তাঁকে ওই বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিদ্যালয় শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছর ধরে বেলতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক–সংকটে ভুগছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে একসঙ্গে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ পান। এর মধ্যে দুজন যোগদান করেন। গত বছরের ২ জুন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু হানিফ অবসরে গেলে দুজন শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালান। এর মধ্যে এক শিক্ষক গত মে মাসের শুরু থেকে চিকিৎসা ছুটিতে যান। ফলে সহকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে গিয়ে দুর্দশায় পড়েন। এমন প্রেক্ষাপটে একজন অস্থায়ী শিক্ষককে আনা হয়।

সহকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক না থাকায় সকালের পালায় প্রাক্‌–প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস শুরু করেন তাঁরা। পালা করে অস্থায়ী শিক্ষকের সহযোগিতায় সব কটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাতে হয় তাঁদের। একইভাবে দ্বিতীয় পালায়ও সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বসিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর পালাক্রমে সব কটি শ্রেণিতে গিয়ে পাঠদান করান তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক না থাকায় স্থানীয় লোকজন নিজেদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয় বাদ দিয়ে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করাচ্ছেন। ফলে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীও কম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গুরুত্বসহকারে নজর দেওয়া উচিত।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, চিকিৎসা ছুটিতে থাকা ওই শিক্ষক রোববার বিকেলে তাঁর ছুটি বর্ধিত করার জন্য এসেছিলেন। শিক্ষক–সংকট বিবেচনায় তা বর্ধিত করা হয়নি।

একজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়টি জানা ছিল না। সোমবার কিংবা মঙ্গলবারের মধ্যে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’