বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন (বামে) ও আনোয়ার হোসেন
বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন (বামে) ও আনোয়ার হোসেন

বগুড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া দুই নেতাকে খুঁজছে পরিবার

বগুড়ার কাহালু উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিএনপির দুই নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। চার দিনেও খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরেও ধরনা দিচ্ছেন তাঁরা। তবে ওই দুই নেতাকে আটকের কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই।

ওই দুই নেতা হলেন কাহালু উপজেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ওরফে হৃদয় এবং উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেনের বাড়ি বীরকেদার ইউনিয়নের ভোলতা গ্রামে আর দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি মদনাই গ্রামে।

এদিকে আনোয়ার ও দেলোয়ারকে অবিলম্বে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তাঁদের নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে আওয়ামী সরকারকেই এর দায় নিতে হবে। আটক ও গুম করে রাখার ঘটনা ভয়ানক অশুভসংকেত। বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতা–কর্মীকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকার এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।

নিখোঁজ দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী সালমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, দেলোয়ার বিএনপির রাজনীতি করলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি থেকে স্থানীয় পলীপাড়া বাজারে চা খেতে যান। সেখান থেকে রাত সাড়ে আটটটার দিকে ফোন করে একটু পরে বাড়ি ফেরার কথা বলেন। কিন্তু এরপরই আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে ফোন করে দেলোয়ারকে দুপচাঁচিয়া সদরে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছার পর র‍্যাবের পরিচয়ে আনোয়ারের সঙ্গে দেলোয়ারকে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়। সেই থেকে তাঁর খোঁজ পাচ্ছেন না।

স্বামীর সন্ধান চেয়ে গত শুক্রবার দুপচাঁচিয়া থানায় জিডি করেছেন জানিয়ে সালমা খাতুন আরও বলেন, ‘আমার বড় ছেলে সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়ছে। আরেক সন্তান কাহালুতে প্রাথমিক স্তরে পড়ছে। দুজনই বাবার জন্য কান্নাকাটি করছে। কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে কিছুই জানি না। কোনো সান্ত্বনা দিতেও পারছি না। থানায় গেছি, র‍্যাবের কাছে গেছি। কেউ কোনো কিছু স্বীকার করছে না। বিনা দোষে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে র‍্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করা হলো। এ কেমন বিচার!’

বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের ভাতিজা নুরুন্নবী সরকারি আজিজুল হক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আনোয়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে একটি প্রকল্পে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। বিএনপির রাজনীতিতে বেশ কিছুদিন ধরে নিষ্ক্রিয় তিনি। ১৪ ডিসেম্বর পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে সেখানে রাত আটটার দিকে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন সদস্য তাঁকে তুলে নেন। এরপর দুপচাঁচিয়া সদরে নিয়ে এসে তাঁর ফোনে ডেকে এনে দেলোয়ার নামের আরেকজন তুলে নেন। এর পর থেকে দুজনের কোনো হদিস মিলছে না।

নুরুন্নবী আরও বলেন, ‘আমার চাচি আট মাসের সন্তানসম্ভবা। সংসারে ছোট দুটি সন্তান। চাচার চিন্তায় চাচি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা থানা–পুলিশ থেকে শুরু করে ডিবিতেও গেছি। কিন্তু কেউ আটকের কথা স্বীকার করছে না। অপরাধ করলে বিচার আদালত করবেন। কিন্তু এভাবে একজন নির্দোষ মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে কেন গুম করে রাখা হবে?’ শেরপুর থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ প্রথমে নিতে রাজি হয়নি দাবি করে নুরুন্নবী আরও বলেন, তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে সোমবার রাতে জিডি নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, ডিবি কাউকে তুলে নেয়নি। ডিবি আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করত। একই কথা জানিয়েছেন র‍্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চক্রবর্তী বলেন, দেলোয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের কথা উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আনোয়ারের নিখোঁজের বিষয়ে জিডি হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম।