সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্লাটিলেট পরীক্ষা হচ্ছে না, ডেঙ্গু রোগীরা বিপাকে

জেলায় এ পর্যন্ত ১৮৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধে্য ১২০ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

সিরাজগঞ্জে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু কক্ষে চিকিৎসাধীন রোগীরা। গতকাল দুপুরে
 ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এ কারণে রোগীদের বাইরে থেকে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এতে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোগীরা।

সিরাজগঞ্জে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় (রোববার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা) নতুন করে জেলার ১৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত ১৮৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধে্য ১২০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অন্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু কক্ষে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সাত। তবে শয্যায় চারজন রোগীকে দেখা যায়।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নের চর ধিতপুর গ্রামের লুত্ফর রহমান (৪৩) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে সেবার মান খুবই খারাপ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সব পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়। স্যালাইন, ওষুধ সব বাইরে থেকে কিনেছি। শুধু কটি প্যারাসিটামল ও গ্যাসের বড়ি দিয়েছে।’

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শাহজাদপুরের চর সিম গ্রামের চাঁদ আলী (২৭) বলেন, ‘প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হচ্ছে। অথচ হাসপাতালে এই পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে পরীক্ষা করতে প্রতিবারে ৪০০-৫০০ টাকা করে নেয়। এরপরও সঠিক রিপোর্টটি পাওয়া যায় না। এ কারণে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’

এ সম্পর্কে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতন কুমার বলেন, হাসপাতালে ৫০ টাকার বিনিময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য যে রিএজেন্ট প্রয়োজন হয় সেটির সরবরাহ নেই। তাই বাইরের প্যাথলজি থেকে এই পরীক্ষা করতে হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই সমস্যা সমাধান করা হবে।

হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স খাদিজা খাতুন বলেন, ‘হাসপাতালে অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন। তবে এরই মধ্যে কয়েক রোগী আমাদের না জানিয়েই বাড়ি চলে গেছেন।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত মে মাসে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। ওই মাসে রোগীর ছিল দুজন। জুন মাসেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ততটা বাড়েনি। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল ১৬ জন, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭, খাজা ইউনূস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ১০ জন, নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন, কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন, উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন ও শাহজাদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

উপসহকারী সিভিল সার্জন আ ফ ম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘এখন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই বিষয়টি জানতাম না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান কারা হবে।’