কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনার এখনো ৪ শিশুসহ ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় নদী থেকে ১৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। তাঁদের মধ্যে ৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের খামার দামারহাট তিস্তা খেয়াপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের চারজন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল খামার দামারহাট পশ্চিম বজরা এলাকার জয়নাল আবেদীনের পরিবার ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন মিলে ২৬ জন একটি নৌকায় ওঠেন। তাঁরা তিস্তার ওপারে রংপুর পীরগাছা উপজেলায় আলীবাবা থিম পার্ক এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় ঈদ–পরবর্তী দাওয়াত খেতে যাচ্ছিলেন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তিস্তার প্রবল স্রোতে উল্টে ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন এবং কয়েকজনকে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকায় করে উদ্ধার করেন। পরে খবর পেয়ে উলিপুর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারে নামে। এ সময় নদী থেকে ৯ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় পশ্চিম বজরা এলাকার আজিজুর রহমানের শিশুকন্যা আয়শার (২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া শিশুটির লাশ আজ প্রশাসনের উপস্থিতিতে দাফন করা হয়েছে।
নৌকাডুবির ঘটনায় জয়নাল আবেদীনের ভাগনে আনিছুর রহমান, তাঁর স্ত্রী রুপালী খাতুন এবং তাঁদের মেয়ে আইরিন আক্তার (৯), আনিছুর রহমানের ভাগনি ইরা মনি (১০), পশ্চিম বজরা গ্রামের পয়জার হকের মেয়ে কুলছুম (৪) এবং আজিজুর রহমানের ছেলে শামীম (৮) নিখোঁজ রয়েছে।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইয়ুম সরদার জানান, নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া শিশুটির লাশ আজ প্রশাসনের উপস্থিতিতে দাফন করা হয়েছে। গতকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনো ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তিস্তায় নৌকাডুবির ঘটনার পর উলিপুর ও কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এবং রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল রাত একটা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালায়। আজ সকাল ৯টায় ডুবুরি দল তিস্তায় পুনরায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় তিস্তার স্রোত বেশি থাকায় ঘটনাস্থলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুপুরের পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে তিস্তা নদীর ভাটিতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ির দিকে খুঁজতে গেছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান জানান, গতকালের নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌকাডুবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরি দল ও পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।