৩ বা ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই না, আগে সংস্কারগুলো দেখতে চাই: মাহমুদুর রহমান মান্না

রংপুরে নাগরিক ঐক্যের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা ক্ষমতার কাঙাল হয়ে যাইনি। তিন মাস বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনও চাই না। আমরা আগে সংস্কারগুলো দেখতে চাই। আমরা প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে চাই। অনুভব করতে চাই, টাকার জোরে কেউ আবার ভোট প্রতিহত করতে পারবে না। টাকার জোরে কেউ গুন্ডা বা পুলিশ কিনতে পারবে না। যখন মনে হবে সত্যি সত্যি মুক্তভাবে মানুষ ভোট দিতে পারবে, তখনই নির্বাচন চাইব। এর জন্য কত দিন লাগবে, আমি জানি না। যোগ্য লোক দেড়-দুই বছরে শেষ করতে পারেন। যদি বাধা হয়, তাহলে তিন বছরও লাগতে পারে। আমাদের কাছে ক্ষমতার লালসা আসেনি যে ছয় মাসের মধ্যে ভোট করে দিতে হবে।’

আজ সোমবার দুপুরে রংপুর নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে নাগরিক ঐক্যের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের রংপুর জেলার আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আজাদ।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। তাঁরা কেউ রাজনীতিবিদ নন। তাই আমাদের সমর্থন নিরঙ্কুশ না হলেও সমর্থনটা চালিয়ে যেতে চাই। যত দিন রাষ্ট্র সংস্কারে সময় লাগে, তত দিন আমরা সমর্থন রাখতে চাই। বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যায়, এমন একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। যেখানে প্রাণ ভরে চতুর্দিকে তাকাতে পারব। কোনো মানুষকে পছন্দ হলে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারব। কারও প্রতি যদি খারাপ কিছু হয়, দুঃখ হয়, তাঁকে যেন সেই কথা বলতে পারি। এই কারণে কেউ আবার ঘাড়ে চেপে ধরবে মারবে, জেলে পাঠিয়ে দেবে, এই রকম পরিস্থিতির অবসান চাই। আইন, বিচার, শিক্ষা, অর্থনীতির সংস্কার চাই। একটা কল্যাণকর বাংলাদেশ চাই।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, ‘দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ চার-পাঁচজন পালিয়েছেন। পুলিশের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা আইজিপির খবর নেই। বহু থানাতে ওসি নেই। এত অত্যাচার মানুষের ওপর করেছেন, এখন তাঁরা মানুষের সামনে দাঁড়াবার সাহস পান না। সেই জায়গায় নতুন পুলিশ দিতে হবে, যারা সত্যিকার জনগণের বন্ধু। আমরা চাই পুলিশ জনগণের বন্ধু হোক। শিক্ষার্থীরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চান। আমরাও তাঁদের সঙ্গে চাই এমন একটা বাংলাদেশ, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। সত্য প্রাধান্য পাবে। সম্মানী মানুষ সম্মান পাবে। লুটপাট বন্ধ হবে। মানুষ নিজের পছন্দমতো ভোট দিয়ে পছন্দের সরকার নির্ধারণ করবে। হয়রানি থাকবে না, মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।’

বিপ্লবী ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বীর সাহসী শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিই। যাঁরা এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতিতে নিয়ে গেছেন। এই আন্দোলনকে বিজয়ের দরজায় আমরা নিতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত ন্যায়-সত্য জিতেছে। শেখ হাসিনার সরকার ১৫ বছর ধরে লাগাতার নির্যাতন চালিয়েছে। পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। আয়নাঘর তৈরি করে মানুষকে মাসের পর মাস আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। আর বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুট করেছে। শেখ হাসিনার এই ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসকের পতন হয়েছে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের দল গোছানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভালো মানুষ না থাকলে ঘুরেফিরে তারাই আসবে। এ জন্য দুর্বৃত্ত সরাতে হলে ভালো কিছু নিয়ে আসতে হবে। যাতে মানুষ ভোট দেওয়ার সময় ভালো মানুষকে খুঁজে পায়। শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলা প্রসঙ্গে মাহমুদুর বলেন, যাঁরা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের কোনো দায়িত্বে রেখে তদন্ত পরিচালনা করা যাবে না। তাঁদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম প্রমুখ।