ফরিদপুরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর নেতারা এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘নিক্সন চৌধুরীর লাগামটা টাইনা ধরেন।’ পাশাপাশি নিক্সন চৌধুরীকে ‘কাউন্সেলিং’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই সভা থেকে।
আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিবাদে এ সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ফরিদপুর জেলা শাখা। সভায় বলা হয়, প্রয়াত জননেতা বৃহত্তর ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এস এম নুরুন্নবী ও তাঁর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াককে জড়িয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।
সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিক্সন চৌধুরী নিজেকে লর্ড মনে করেন। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনে সদরপুরের জনগণ নিক্সনের এই সব ফাজলামি মেনে নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর এসব ভাষা আমরা সহ্য করব না। আগামী দিনে আর আপনাকে কনসিডার করা (ছাড় দেওয়া) হবে না। হুঁশিয়ার হয়ে যান। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অশ্লীল কথা বলার আগে “এসএ, আরএস” (বংশানুক্রমিক ইতিহাস বোঝাতে) দেইখা কথা কবেন।’
সাইফুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি যে পরিবারের সন্তান, আপনার তো এ রকম গালাগালি করার কথা না। আপনার বাবা এ ভাষায় কথা বলেননি। আপনার ভাই এ ভাষায় কথা বলেন না। আপনি এ ভাষা কোথায় পেলেন?’
নিক্সন চৌধুরীর বক্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে সাইফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘পিতা নাই, আপনি আছেন। নিক্সন চৌধুরী একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি যেভাবে, যে ভাষায় আপনার মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে কথা বলেন, এ বিচারের ভার আপনার কাছে দিয়ে গেলাম। নিক্সন চৌধুরীর লাগামটা টাইনা ধরেন।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ফরিদপুরের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলী বলেন, ‘নিক্সন চৌধুরী নৌকা নিয়া নির্বাচন করেন না। উনি সব সময় আওয়ামী লীগের কর্মী–নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। অথচ উনি রাজাকারদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। উনি রাজাকারদের প্রতিভূ হয়ে উঠেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এই ভাষা কোথা থেকে রপ্ত করেছেন, জানি না। সংসদে আপনার কথা আমরা শুনি না। গালাগালি ছাড়া যদি কথা বলতে না পারেন, মুখ বন্ধ করে রাখেন। আপনার এসব ভাষা দেশের লোক আর শুনতে চায় না। আমরা মনে করি, আপনার কাউন্সেলিং প্রয়োজন। এক ঘণ্টার কাউন্সেলিং করলে ঠিক হয়ে যাবেন।’
বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলী আরও বলেন, ‘আরিফ, এস এম নুরন্নবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলেছেন, আপনাকে ভদ্র ভাষায় বলি, আপনি আপনার ওই সব বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। আপনি একজন মাননীয় সংসদ সদস্য। গণতন্ত্র মানুষকে সহিষ্ণু করে, কিন্তু আপনার মধ্যে সহিষ্ণুতার অভাব আছে। আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা আপনি ছাড়েন। আপনি কিন্তু কোথাও দাঁড়াতে পারবেন না। আমরা আজ প্রতিবাদ করে গেলাম। ভবিষ্যতে করলে আপনাকে প্রতিরোধ করা হবে। আপনার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের কারণে আপনার প্রতি মানুষের ঘৃণা দিনে দিনে বাড়ছে। এইগুলা ছাড়েন। আপনার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং ফরিদপুরবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।’
ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিরউদ্দিন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহসভাপতি শরিফ কাওসার।
নিক্সন চৌধুরীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় তাঁর এপিএস এস এম খায়রুল বাশারের সঙ্গে। তিনি জানান, নিক্সন চৌধুরী চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।