কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক গৃহকর্মীর নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এক চিকিত্সকের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের ব্যুরোপ্রধান রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও ক্যামেরাপারসন কামরুল হাসান। আজ বুধবার বেলা ১১টায় ওই হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ওই চিকিত্সক ও তাঁর সহযোগী কর্মচারীরা তাঁদের ধাক্কা দিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. লুত্ফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে (১০) একটি ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে বাথরুম থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও কামরুল হাসান কারও অনুমতি না নিয়েই হাসপাতালের ভেতর ঢুকে যান। তাঁরা সুমির ভিডিও ধারণ করছিলেন। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু জাফর তাঁদের বাধা দেন এবং কেন তাঁরা অনুমতি না নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকেছেন, তা জানতে চান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওয়ার্ডে ঢোকার পর গৃহকর্মীর দুটি দৃশ্য ধারণ করে ক্যামেরাম্যান। তখন চিকিৎসক ও কর্মচারীরা এসে বাধা দেন। অনুমতি নিয়ে ঢুকছি কিনা জানতে চান। আমরা তো এই ধরনের সংবাদ করতে গেলে সাধারণত অনুমতি নিয়ে ঢুকি না।’
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ আবু জাফর এসে তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ শুরু করেন। পরে তিনি কর্মচারীদের নিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাঁদের ওই ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করা আছে।
চিকিত্সক আবু জাফর বলেন, ‘আমি কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। শুধু অনুমতি না নিয়ে ঢোকায় কথা-কাটাকাটি হয়েছে।’
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, তিনি সরকারি একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন। ওই সাংবাদিকের সঙ্গেও মুঠোফোনে তাঁর কথা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জাঙ্গালিয়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা আলমের বাসার গৃহকর্মী ছিল সুমি (১০)। গতকাল রাতে তাকে মারধর করে শৌচাগারে আটকে রাখা হয়। রাতে সুমির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে পাশের বাসার লোকজন ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশে খবর দেন। রাত সোয়া নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসার তালা ভেঙে বাথরুমের ছিটকিনি খুলে সুমিকে উদ্ধার করে। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুমির চোখ, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার সুমি পুলিশকে জানিয়েছে, তার মা–বাবা নেই। বাড়ি কোথায় তা–ও জানা নেই। অনেক দিন ধরে এ বাসায় কাজ করছে সে। প্রায় প্রতিদিন কারণে-অকারণে গৃহকর্ত্রী তাকে মারধর করেন। গতকাল সকালে কাঠ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাকে জখম করা হয়। এর বাথরুমে আটকে রেখে বাসায় তালা দিয়ে বাড়ির লোকজন বাইরে চলে যান। তার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে গতকাল রাতে ওই বাসার বাথরুম থেকে গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়। রাতেই বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে লাকসাম থেকে গৃহকর্ত্রী ফারহানা আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় খবর দেওয়া প্রতিবেশী আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ওই দম্পতির বিরুদ্ধে আজ দুপুরে মামলা করেছেন। ফারহানা আলমকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, ওই গৃহকর্মীর বিস্তারিত পরিচয় এখনো জানা সম্ভব হয়নি। গৃহকর্ত্রী তাঁর মায়ের মাধ্যমে চার বছর বয়সে সুমিকে এ বাসায় এনেছিল। পাঁচ বছর আগে গৃহকর্ত্রীর মাও মারা গেছেন। আপাতত গৃহকর্মী সুমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।