বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে বছরের শেষ সময়ে ভ্রমণে এসেছেন হাজারো মানুষ। এই পর্যটকদের বেশির ভাগই এসেছেন খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডারে বছরের শেষ রাত ও নতুন বছরের প্রথম প্রহর অর্থাৎ, থার্টি–ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করতে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বর্ষবিদায় কিংবা বর্ষবরণের কোনো আয়োজন করা যাবে না।
পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাইফগার্ড কর্মীরা বলছেন, ২০২২ সালের শেষ সূর্যকে বিদায় জানাতে প্রতিবছর এই সৈকতে সমাগম ঘটে অন্তত তিন লাখ পর্যটকের। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। ইতিমধ্যে দুই লাখের কাছাকাছি পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার আসতে পারেন।
থার্টি–ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনে পুলিশ প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় হতাশার কথা জানিয়েছেন সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে সৈকত ভ্রমণে আসেন সিলেটের জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৈকত এলাকার পাঁচতারকা হোটেল সি গালে থেকেছিলেন তিনি। তখন হোটেলের সামনের সৈকতে নেমে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সঙ্গে থার্টি–ফাস্ট নাইট উদ্যাপন করেন। হোটেলেও ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন ছিল। এবারও চার দিনের সফরে এসে ওঠেন একই হোটেলে। কিন্তু হোটেল এবং সমুদ্রসৈকতে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের কোনো আয়োজন নেই দেখে অবাক হতে হলো।
সি গাল হোটেলে কক্ষ আছে ১৭৯টি। আজ শুক্রবার সব কটি কক্ষে অতিথি আছেন জানিয়ে হোটেলটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী বলেন, এবারও থার্টি–ফাস্ট নাইটের কোনো আয়োজন হোটেলে রাখা হয়নি। তবে অতিথিদের জন্য হোটেলের খোলা মাঠে (সুইমিংপুলের পাশে) ডিনারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আরও কয়েকজন পর্যটক বলেন, ভ্রমণে আসা কমবেশি সবার ইচ্ছে ছিল, সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে পুরোনো ২০২২ সালকে বিদায় এবং নতুন বছরকে ২০২৩ সালকে বরণ করার। এ সময় আতশবাজি ঝলকানি এবং ফানুসের আলোয় ঝলমল হতো অন্ধকার আকাশ। আগেও তিন চার লাখ মানুষের উপস্থিতিতে থার্টি–ফাস্ট নাইটের উৎসব হয়েছে। তখন নাশকতা, বোমা হামলার চিন্তা কারও মাথায় ছিল না। কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি–ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কনসার্ট, গান বাজনাসহ সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিথিদের জন্য নববর্ষ উদ্যাপনের আয়োজন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনা করা হবে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন করতে পারবে না কেউ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। বিধিনিষেধ পালনে টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।